প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৮
জুলাই সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দলটির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এনসিপি মনে করে এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি আইনি বৈধতা অর্জন করবে না, বরং এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এনসিপি দীর্ঘদিন ধরে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছে। তাদের মতে, আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া স্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে পারে না। এনসিপির ভাষায়, জুলাই সনদের মতো উদ্যোগগুলো প্রায়ই প্রতিশ্রুতির মধ্যে আটকে যায়, কিন্তু কার্যকর বাস্তবতা তৈরি করতে পারে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যদি রাষ্ট্রিক বা সাংবিধানিক কোনো কাঠামো পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি না হয়, তবে এতে অংশ নেওয়ার অর্থ কেবল রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়া, যা এনসিপি করতে আগ্রহী নয়। দলটি বিশ্বাস করে, প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমে আইনি ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রয়োজন।
তবে এনসিপি জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশন যেহেতু সময় বৃদ্ধি করেছে, তারা কমিশনের পরবর্তী পর্যায়ে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে। তাদের দাবি পূরণ হলে ভবিষ্যতে তারা স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাও খোলা রাখছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, এনসিপি পুরোপুরি বিরোধিতার পথে না গিয়ে আলোচনার সুযোগ রাখতে চায়।
দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জুলাই সনদের মতো উদ্যোগে অংশ নিতে তারা আগ্রহী, তবে শর্ত হলো স্বচ্ছ ও আইনি কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এটি একতরফা চুক্তিতে পরিণত হতে পারে, যা জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন সৃষ্টি করবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে জুলাই সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে এনসিপির অংশ না নেওয়ার ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির এই সিদ্ধান্ত জুলাই সনদ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ, ছাত্র ও তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত এই দলটি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আন্দোলনে অন্যতম সক্রিয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। তাদের অনুপস্থিতি আলোচনার পরিধি সংকুচিত করতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।
অনেকের মতে, এনসিপির এই অবস্থান রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। দলটি চায় প্রক্রিয়াটি যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের কার্যকর ভিত্তি হয়ে ওঠে। সময়ই বলে দেবে, এনসিপি শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদে যোগ দেয় কি না।