অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতা ও কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতি, ঝুঁকি বাড়ছে-টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
সামির আসাফ, প্রতিনিধি ( ঢাকা )
প্রকাশিত: সোমবার ১৮ই নভেম্বর ২০২৪ ০২:৩৫ অপরাহ্ন
অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতা ও কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতি, ঝুঁকি বাড়ছে-টিআইবি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসন পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতা এবং কার্যকর কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতির কথা তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি তাদের এক গবেষণাপত্রে এই ঘাটতির পাশাপাশি সরকারের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।


সোমবার (১৮ নভেম্বর) ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, "নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার এবং একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন এখনো দৃশ্যমান নয়, কারণ সরকারের কৌশল এবং রোডম্যাপ অনুপস্থিত।"


টিআইবি আরও জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিতর্ক আছে, বিশেষ করে উপদেষ্টা নিয়োগ এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অ্যাডহক প্রবণতা। এর ফলে সরকারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং কর্মপরিকল্পনায় সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট হয়েছে। সরকারের কার্যক্রমে তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং কাঠামোগত সংস্কারের দাবি তোলার পাশাপাশি টিআইবি আক্ষেপ প্রকাশ করেছে যে, সরকারের কর্মকাণ্ড প্রাথমিক পর্যায়েই বিতর্কিত হয়েছে।


গবেষণাপত্রে দেশের ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন এবং নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপরও আলোচনা করা হয়। বলা হয়, নতুন সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়। তবে টিআইবি মনে করে, সরকারের অনীহা এবং অগ্রসর না হওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে।  


এছাড়া, টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম এবং দখল-দন্দল এখনও চলমান, যা একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এবং দলীয়করণের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দল এবং সমাজের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে সঠিক সময়ে ধৈর্যের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।


গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি। তাদের মতে, সরকার পতনের পর গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ, হুমকি এবং কিছু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার উদ্যোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ।  


বিদেশি সহায়তা সম্পর্কেও টিআইবি সতর্ক করেছে। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি যেমন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এবং আইএমএফ-এর ঋণ সহায়তা সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী দেশে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বোঝা সৃষ্টি করতে পারে, যা সরকারের জন্য একটি বড় ঝুঁকি হতে পারে। 


টিআইবি সমগ্র প্রক্রিয়ায় সরকারের জন্য যথাযথ কৌশল, পরিকল্পনা এবং দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে দেশে স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।