কাওলা থেকে দাশেরকান্দি রুটে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ ১৫ বছরেও সম্পন্ন হতে পারেনি, যা প্রকল্পের সময়সূচির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। সরকারের এই মেগা প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সমস্যার কারণে প্রকল্পের কাজ সেভাবে এগোতে পারেনি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতালিয়ান থাই (ইতালথাই) ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি, যা মূলত ৫১ শতাংশ মালিকানা ছিল, তার আর্থিক সক্ষমতার অভাবে প্রকল্পটি থমকে ছিল। এই কোম্পানিটি পরবর্তীতে ৪৯ শতাংশ মালিকানা চীনা দুটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গত ৯ মাস ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। তবে, বর্তমানে সব ধরনের জটিলতা নিরসন হওয়ায়, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার আশা রয়েছে।
এছাড়া, প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হলেও, নির্মাণকাজে নানা ধরনের পরিকল্পনা-জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে র্যাম্প স্থাপন নিয়ে শহরে যানজটের সৃষ্টি হওয়া, শহর বাইপাসের পরিবর্তে র্যাম্পের কারণে ফ্লাইওভারে পরিণত হওয়া, এসব বিষয় এখন বড় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। প্রকল্পে ৩১টি র্যাম্পের মধ্যে ১৫টি র্যাম্প ইতিমধ্যে চালু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, মহাখালী এবং ফার্মগেটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।
প্রকল্পের মেগা স্কেল এবং সাড়ে ৪৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যসহ মোট খরচ ৮ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি টাকা বিদেশি ঋণ সহায়তায়। এই প্রকল্পের ১৫টি র্যাম্পের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল অনেকাংশে দ্রুত হওয়া উচিত হলেও, বাস্তবে উল্টো বেশ কয়েকটি র্যাম্পে যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, "ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই প্রকল্প ৩ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরেও তা শেষ হয়নি। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক দুর্বলতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার অদক্ষতা এতে বড় ভূমিকা রেখেছে।"
প্রকল্পের অগ্রগতি এখন ৭৫ শতাংশ, কিন্তু নানা সমস্যা থাকায় প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হতে পারে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে। তবে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস আশাবাদী, "ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ পুনরায় শুরু হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প চালু করা সম্ভব হবে।"
যেহেতু ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধানে এই প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম, তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং জনগণ একযোগে আশা করছে, এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে এবং আগামী দিনে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির পথ সুগম করবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।