প্রকাশ: ৯ অক্টোবর ২০২৩, ৩:৫২
এভারকেয়ার হাসপাতালে অসুস্থ খালেদা জিয়ার জীবনে কোনো হুমকি আসলে পরিণতি শুভ হবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ এতো বোকা নয়,তারা বোঝে সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হচ্ছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি এদেশে জনগণকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলেছিলেন হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে যদি রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া যায় তাহলে আর কোনো প্রতিপক্ষ থাকবে না। এইভাবেই অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে কারাগারের মধ্যে তাকে একটা বসবাসের অনুপযোগী ঘরের মধ্যে রেখে তাকে আজকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
আজ সোমবার (৯ অক্টোবর) সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া সুপারিশের পর বিকালে এক সমাবেশে দলটির মহাসচিব এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি প্রদানের দাবিতে ১৪ সেপ্টম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে অনশন করবে বিএনপি। পুরানা পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
‘ওরা ফ্যাসিস্টদের ধারক-বাহক’
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক দল না। এটা এখন এই ফ্যাসিস্ট শক্তির ধারক-বাহক হয়েছে। কিছু সংখ্যক আমলা যারা মানুষকে অত্যাচার করে, কিছু সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা মানুষের অত্যাচার-নির্যাতন করে অর্থাৎ যারা এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, কিছু সংখ্যক লুটেরা ব্যবসায়ী তাদের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এখন আর জনগণের দল নাই, তারা এখন পুরোপুরিভাবে ফ্যাসিবাদের ধারক-বাহকে পরিণত হয়েছে।
‘সাজায় আন্দোলন দমানো যাবে না’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে একটা মামলার সাজা দিয়েছে। আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, গণশিক্ষা বিষয়ক সহ সম্পাদক বেলাল আহমেদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকনসহ ১৫জনকে সাজা দিয়েছে। গতকাল আরেকটার আদালতে ১৫জনকে সাজা দিয়েছে।
এরা (সরকার) মনে করেছে এসব সাজা দিলে এরা বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। হয়েছে কি? প্রতিরোধ করা যাবে না। প্রতিদিন একেকটা সাজা হাজার হাজার জিয়ার সৈনিক তৈরি করছে। বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মতো। যতোই তোমরা চেষ্টা করো যে ধবংস করবে সেই ধবংস স্তুপ থেকে বিএনপি জেগে উঠবে। ওরা ভেবেছিলো দেশনেত্রীকে জেলে নিয়ে গেলে বিএনপি আর থাকবে না। বিএনপি আরো শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপি এখন জেগে উঠেছে, এই সরকারের পতনের মরণ পণ আন্দোলন শুরু করে্ছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, লুতফুজ্জামান বাবরসহ নেতাদের মিথ্যা মামলায় সাজার দেয়ার কথাও তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিস্কার করে বলে দিতে চাই, জনগনকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করা না পর্যন্ত দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও জিয়ার সৈনিকরা ক্ষান্ত হবে না, তারা অবশ্যই পরাজিত করবে।
‘মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। চাল-ডাল-তেল-লবনের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নাই। এই সরকার রিজার্ভের পরিমান কমতে কমতে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, আর কয়েকদিন পরে আমদানি করার আর অর্থ থাকবে না।
তিনি বলেন, আমাদের দখলদার প্রধানমন্ত্রী খুব ধমক দিয়ে বলেছেন যে, রিজার্ভ কমছে, রিজার্ভ কমছে বলে ওরা চিৎকার করছে। তাহলে বন্ধ করে দেই, বন্ধ করে দেই বিদ্যুত, বন্ধ করে দেই পানি। কথা শুনলে মনে হয় আমরা রাজতন্ত্রের বাস করছি, আমাদের মালিক একজন, সেই মালিক হচ্ছেন শেখ হাসিনা। এটা কোনো রাজতন্ত্রের দেশ নয়। এর মালিক জনগণ।
তিনি বলেন, দেয়ালের লিখন পড়েন। এখনো বুঝতে পারছেন না আপনাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। ইতিহাস ভুলে যাবেন না। এভাবে দেশ কেউ চালাতে পারে না। হিটলার পারেনি, মোসলিন পারেনি, এদেশে আইয়ুব খান পারেনি, ইয়াহিয়া খান পারে নাই। এদেশে আমাদের হোসেইন মো. এরশাদও পারে নাই।
ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামুসজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নারিস উদ্দিন অসীম, আবদুল মালেক রতন, মীর সরাফত আলী সপু, রাকিবুল ইসলাম বকুল, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, ওলামা দলের শাহ নেছারুল হক প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এ সরকারের কাছ থেকে সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি আশা করা যায় না। এরা দানবীয় সরকার। একটি মৃত্যু পথযাত্রী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করে এরা কতটুকু অসভ্য। খালেদা জিয়াই এ দেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলো। তারা বাকশালের পেটে ঢুকে গিয়েছিলো। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র এনেছিলেন। আজকে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন। কোন সংবিধানের দোহাই দিয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন খালেদাকে আমি ক্যান্টমেন্ট বের করেছি। তাহলে কোর্টের দোহাই দিলেন কেনো? মুলত সেদিন থেকেই তাকে হত্যার ছক তৈরি করা হয়েছিলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা হাজার বার বলছি। কিন্তু অবৈধ সরকার শুনছে না। আজকে ১৫ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। বিচারবিভাগকে কাজে লাগিয়ে আবারও একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের কারো ঠিকানা জেলখানা অথবা ইলিয়াস আলীর অবস্থা হবে। লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছে তা উত্তর দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। বিএনপি নেতাকর্মীরা কখনো এই অসভ্য ভাষায় কথা বলে না। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কাউকে চিকিৎসা করতে দিবেন না। আপনার চিকিৎসাও বাংলাদেশে হবে না। কেউ চিকিৎসা করাবে না। শেখ হাসিনার পতন হওয়া ছাড়া কেউ মাঠ ছাড়বে না। সভা সমাবেশে মাধ্যমে এই সরকারের পতন হবে না। কঠিন কর্মসূচির প্রস্তুতি নেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়া সম্মুখ দরজা দিয়ে রাজনীতিতে নেমে জনগণের নেত্রী হয়েছেন। এটি সরকার সহ্য করতে পারেনি। তাই তাকে অন্তরীণ করে রেখেছে। শুধু তাই নয়, বিনা চিকিৎসায় হত্যা করার চেষ্টা করছে। আজকে যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে তাদের সহ্য করতে পারে না। আজকে বিনাদোষ তাকে আটক রাখা হয়েছে। তারা ভেবেছিলো বাকশাল করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে। তাই বিএনপিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। মনে করেছিলো খালেদাকে ধ্বংস করলে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে দেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে আছেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে যে দেশ স্বাধীন করেছি সে দেশে আইনমন্ত্রী বেআইনি কথা বলে। অর্থমন্ত্রী অনর্থের মুল। পররাষ্ট্র যে ভাষায় কথা বলেন মনে হয় উনি অন্য দেশের মন্ত্রী। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই ব্যবসায়ীর ভাষায় কথা বলেন। যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছি, সে গণতন্ত্র ভোগ করতে পারছি না। গণতন্ত্রের মাকে আজকে বন্দী রাখা হয়েছে। আজকে দেশের কোটি কোটি মানুষ তার জন্য দোয়া করছেন। আজকে নির্বাচনে অযোগ্য করার জন্য নেতাদের কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে। সরকার এগুলো করে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে যারা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ হিসেবে আটক রেখেছে তারা শুধু সংবিধান লঙ্ঘন করেনি, তারা হত্যা পরিকল্পনার আসামী। আজকে ডাক্তাররা পরিস্কার করেছে তারা খালেদাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকে শংকা করছেন তাকে খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে এমন কিছু দেয়া হয়েছে তার জন্য জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এটি ফ্যাসিস্টদের কাজ। তাদের কাজ হত্যা করা, জেলে নেয়া, গুম করা। এই ফ্যাসিস্ট যতদিন থাকবে দেশনেত্রীর মুক্তির সুযোগ দেখছি না। তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে। দেশকে মুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপির সাথে আলোচনার সুযোগ নেই। থাকবে কি করে। তাহলে ভোট চোরের প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কিভাবে?
সেলিমা রহমান বলেন, সরকার জিয়া পরিবারকে ভয় পায়। তারা জানে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। একটি মানুষ কতদিন বাঁচবে কেউ বলতে পারবে না। অথচ, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে যে অযাচিত কথা বলেছেন সারাদেশের মানুষ তার বক্তব্যে ছি ছি দিচ্ছে।