আজহারী কেন গ্রেফতার হয়নি, প্রশ্ন মেননের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:১৮ অপরাহ্ন
আজহারী কেন গ্রেফতার হয়নি, প্রশ্ন মেননের

শরিয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করে জেলখানায় রাখার কথা উল্লেখ করে ওয়াজকারী মিজানুর রহমান আজহারী কীভাবে দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারল তা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, আজহারী সম্পর্কে ধর্মমন্ত্রী বলেছেন তিনি জামায়াতের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন। আইসিটি আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বরং তাকে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় চলে যেতে দেয়া হয়েছে। শরিয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মেনন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এদেশকে ধর্ম নিরপেক্ষতার মূলনীতি উপহার দিয়েছিলেন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের বিরুদ্ধে তিনি কেবল সোচ্চার ছিলেন না, বাস্তবে তার অনুসরণও করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি এ সংসদে স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ইউটিউবে প্রচারিত ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী কিছু বক্তব্যের পেন-ড্রাইভ দিয়েছিলাম। সে সবের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানা নেই। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর স্বপক্ষে ওয়াজকারী জনৈক আজাহারী সম্পর্কে ধর্মমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জামায়াতের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন। অথচ আইসিটি আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। বরং তাকে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় চলে যেতে দেওয়া হয়েছে। আর শরিয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কি অতীতের মতো আবার মৌলবাদকে পোষকতা দিচ্ছে? না হলে আজাহারী দেশ ছেড়ে যেতে পারেন না। খতমে নবুয়ত নতুন করে হুঙ্কার ছাড়তে পারে না। হেফাজত সমর্থন (?) প্রত্যাহারের হুমকি দিতে পারে না। এরাই ক’দিন পর পাকিস্তানি কায়দায় ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করতে বলবে, যেমন এ সংসদেই যুদ্ধাপরাধী নিজামী সে প্রস্তাব তুলেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নামে যে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে তাকে পাকিস্তানি আদলে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তার ছেঁদ ঘটানো হয়েছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টার অবসান হয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রচারে, আমাদের আচার-আচরণে, বেশ-ভূষার পরিবর্তনে তার রেশ আমরা দেখি। ফেসবুক, ইউটিউবের নিত্য প্রচারে সে মানসিকতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন।

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ভোট থেকে মানুষের এ দূরত্ব গণতন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। নির্বাচন তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোকেও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে।’ মেনন আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই তারা মরিয়া আক্রমণ করবে। ওই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ডান ও তথাকথিত বামও এক হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী সংসদে অর্থনীতির ভালো অবস্থার কথা বললেও, বাইরে স্বীকার করেছেন যে রফতানিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নেতিবাচক। বিরোধী সদস্যরা তাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী না বলায় তিনি দুঃখ পেয়েছেন। তবে ‘বৃক্ষ তোর নাম কি, ফলে পরিচয়’। জুন মাসের বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে বৈষম্য কী পরিমাণ বেড়ে যাবে তা দেখার বিষয়। আয়বৈষম্য এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যাকিং খাতের দুরবস্থার কথা না বললেই নয়।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব