সিংহ-মুখী সন্তানকে সার্কাসে বেঁচে দিলেন মা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ২২শে মে ২০২০ ১০:২৪ অপরাহ্ন
সিংহ-মুখী সন্তানকে সার্কাসে বেঁচে দিলেন মা!

সার্কাস দেখতে কে না পছন্দ করে! বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত সার্কাস ইউরোপের নানা দেশে বেশ জনপ্রিয় ছিল। সার্কাসে বিভিন্ন পশু পাখির সঙ্গে শারীরিকভাবে কিছুটা অস্বাভাবিক ব্যক্তিদেরকেও রাখা হত।  এজন্য বার্নুম ও বেইলি সার্কাস এবং রিংলিং ব্রাদার্সের সার্কাস সবার কাছে অনেক পরিচিত হয়ে ওঠে। এর মূল কারণ ছিল তাদের সংগ্রহে ছিল অস্বাভাবিক কয়েকজন মানুষ। এদের মধ্যকার একজন ছিলেন ছিলেন স্টিফান বিব্রোস্কি। যাকে বলা হত লায়নেল সিংহ-মুখী মানুষ। 

তার মুখ জুড়ে সিংহের মতো লম্বা চুল ছিল। ১৯৯১ সালে বার্নুম ও বেইলি সার্কাস এবং রিংলিং ব্রাদার্সের সম্মিলিত সার্কাস বিব্রোস্কির জন্য আরো সুপরিচিত হয়ে ওঠে। বিব্রোস্কি তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিতেন।বিব্রোস্কি লিওনেল দ্য লায়ন-ফেসড ম্যান নামেও পরিচিতি লাভ করেন। 

স্টিফান বিব্রোস্কি পোল্যান্ডে ১৮৯১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর অন্য সাধারণ মানুষের মতোই বেড়ে উঠছিলেন তিনি। তবে যতই বড় হতে থাকলেন ততই তার শরীর ও মুখের লোম বাড়তে থাকে। একসময় সিংহের মতো সারা মুখ জুড়ে তার লম্বা চুল দেখা যায়। 

স্টিফানের মা বলেন, তিনি যখন গর্ভবতী ছিলেন তখন স্টিফানের বাবাকে সিংহ আক্রমণ করে। সেখান থেকে স্টিফানের বাবা বেঁচে ফিরলেও সঙ্গে করে সিংহের অভিশাপ নিয়ে আসেন। তারা মনে করেন সিংহের অভিশাপেই তাদের সন্তানের এমন অবস্থা হয়েছে। স্টিফানের মা তাকে দানব ভাবতে শুরু করে। 

এরপর তাকে জার্মানির একটি সার্কাসে বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে অনেক জায়গায় হাত বদল হয়ে শেষে বার্নুম ও বেইলি সার্কাসে কাজ করার সুযোগ পান স্টিফান। তার স্বভাব ছিল খুবই শান্ত শিষ্ট, নমনীয় এবং বুদ্ধিমান। অভিনয়ের পাশাপাশি তার আচরণেও সবাই সন্তুষ্ট ছিল। 


তিনি সবসময় তার সহশিল্পীদের সহযোগিতা করতেন। স্টিফান পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। তিনি ছিলেন খুবই মেধাবী। নতুন সব চমক দিয়ে তিনি দর্শকদের আনন্দ দিতেই কাটিয়ে দিয়েছেন সারা জীবন। সত্যিকার অর্থে তরুণ স্টিফান হাইপারট্রিকোসিসে ভুগছিলেন। যা ওয়েয়ারল্ফ সিন্ড্রোম নামেও পরিচিত। এই রোগে যারা ভোগেন তাদের শরীরে অন্যদের তুলনায় দ্রুত লোম বড় হতে থাকে। 

দ্য বিয়ার্ড লেডি বা দাড়িওয়ালা নারী নামে পরিচিত অ্যানি জোন্স স্টিফানের সঙ্গে কাজ করতেন। তারা একই সার্কাসে সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। অ্যানি জোন্সও স্টিফানের মতো একই ব্যাধিতে ভুগেছেন। তারা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা দেশে শো করেছেন। বার্নুম ও বেইলি সার্কাস স্টিফানকে দিয়ে অনেক অর্থ রোজগার করেছে। 

স্টিফান, অ্যানি জোন্স ছাড়াও আরো অনেক মানুষ ছিল  বার্নুম ও বেইলি সার্কাসে। জীবনের ৩০ বছর তিনি সার্কাসে কাটিয়েছেন। মাত্র ৪১ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্টিফান। তবে অনেকের মতে, স্টিফান তার এই জীবন বেশ উপভোগ করেছেন। তার বাবা মায়ের প্রতি কোনো অভিযোগ ছিল না। 

কথিত আছে, একবার নিউ ইয়র্ক সিটিতে থাকার সময় তার হোটেলে আগুন লেগে যায়। তখন সবার আগে স্টিফান বিব্রোস্কি সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। সিংহ-মুখী স্টিফান দাবি করেছিলেন, আগুনে যদি তার লম্বা চুলগুলো পুড়ে যায় তাহলে তো সে সাধারণ মানুষ হয়ে উঠবেন। তাই তিনি কোনো কিছুর চিন্তা না করে খালি হাতে একাই হোটেল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।  সূত্র: অলদ্যাটইন্টেরেস্টিং

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব