
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ২১:২৫

রাবনাবাঁধ নদীর ভাঙনে ক্রম:শই ছোট হয়ে আসছে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের মানচিত্র। ভিটা মাটি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়েছে ওই এলাকার প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। এছাড়া বর্ষা মৌসুম হওয়ায় ভাঙা বেড়িবাধ দিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছে জোয়ারের পানি। বন্ধ হয়ে গেছে কৃষিকাজ। ফলে দুর্ভোগে দিন পার করছেন ওই এলাকার কয়েক হাজার কৃষক। লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের মোট আয়তন ছিল ৪৯ বর্গকিলোমিটার। ক্রমান্বয়ে তা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৯ বর্গকিলোমিটারে। ওই ইউনিয়নের ৪৭/৫ পোল্ডারে সাত কিলোমিটারের অবস্থা খুবই নাজুক। অব্যাহত ভাঙনে যে কোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে চাড়িপাড়া, নাওয়াপাড়া, বানাতিপাড়া, ১১নং হাওয়া, চৌধুরিপাড়া, নয়াকাটা, মুন্সীপাড়া, চান্দুপাড়া, হাসনাপাড়া,.চর-চান্দুপাড়া ও পশরবুনিয়া গ্রাম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাবনাবাঁধ নদীর প্রবল স্রোতে চাড়িপাড়া গ্রামের বিকল্প বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ সিডরের সময় ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই জোয়ারের সময় পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। নদীর পানির স্তর স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট বেড়ে গেছে। অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে কমে যাচ্ছে ওই ইউনিয়নের ভূখন্ড। প্রতিনিয়ত ভূমিহীন হয়ে পড়েছ নতুন নতুন পরিবার। মজবুত বাঁধ নির্মানসহ যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহন না করলে এই জনপদটি পুরোপুরি বিলিন হওয়ার শংকা করছে এলাকাবাসী।
চারিপাড়া গ্রামের রফিক হাওলাদার জানান, এক সময়ের বিত্তশালী পরিবারের সন্তান রফিক হাওলাদার এখন নিঃস্ব হয়ে চারিপাড়া গ্রামের ভাঙা বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের পরিবার। তাদের পূর্ব পুরুষরা ১০০ বছর ধরে নদী গর্ভে বিলীন হওয়া বাড়ীতে বসবাস করে আসছিল। তাদের বাড়ীর সামনে এক একর জমি ছিল, সবই নদীতে বিলিন হয়েছে। এ বছর ভাঙ্গনের পরিমান অনেক বেশি। এখন বার্ধক্যে এসেও নদীতে মাছ ধরে চলে তার সংসার। নাওয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, বাঁধ ভাইঙ্গা যাওনে মোগো সব শ্যাস অইয়া গ্যাছে। মোগো কপালডাই পুইর্যা গ্যাছে। চাষবাস কইর্যা যে খামু হেইরহম অবস্থাও নাই। চারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ফোরকান জানান, স্কুলের চারপাশে কোন বেরিবাঁধ নেই। জোয়ারের সময় চাড়িপাড়া, চৌধুরিপাড়া, নয়াকাটা, বানাতিপাড়া গ্রামের ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে পারেনা। আমাদের নিজেদেরকে ট্রলারের মাধ্যমে স্কুলে যেতে হয়।
লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, চারিপাড়ার মানুষ নিঃস্ব ও অসহায়। বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিয়ষটি জনগনের স্বার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারপরও সমস্যা সমাধান হচ্ছেনা। কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়ালিউজ্জামান জানান, লালুয়ার ইউনিয়নে সাত কিলোমিটার বেরিবাঁধ ভাঙ্গন পায়রা সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙরের জেটি নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া রয়েছে। এ কারনে সেখানে এখন বাঁধসহ অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কাজ বন্ধ । চারিপাড়া গ্রামে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজ শুরু হলে গোটা এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। তখন আর এই দুর্ভোগ থাকবে না।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব