রাজবাড়ীতে শাহীন বিশ্বাস (২৩) নামে এক যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) মো. লাবিবের বিরুদ্ধে। পুলিশি নির্যাতনে তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন শাহীনের বাবা ফয়জুদ্দিন বিশ্বাস। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।শাহীনের বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মহেন্দ্রপুর গ্রামে। তিনি এক সময় গাজীপুরে রঙ মিস্ত্রির কাজ করতেন।সরেজমিন শাহীনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ছোট্ট ভাঙা ঘরে চৌকির ওপরে শুয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন শাহীন। পাশে বসে তার মা কাঁদছেন।শাহীন বলেন, ‘প্রায় ৩ বছর গাজীপুরে রঙ মিস্ত্রির কাজ করেছি। ওই সময় সাদিয়া নামে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটি ভালোবাসার টানেই আমার সঙ্গে রাজবাড়ীতে চলে আসে। এখানে আসার পর আমরা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করি। পরে সাদিয়ার বাবা হাফিজ শেখ গাজীপুর থেকে রাজবাড়ীতে মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে আসেন। আমার স্ত্রী তার বাবার সঙ্গে ফিরে যেতে রাজি না হলে তিনি চলে যান। পরে ৩০ জুলাই দুপুরে কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম ও এসআই আবু শহিদের সঙ্গে আরও দু’জন পুলিশসহ সাদিয়ার বাবা-মা আমাদের বাড়িতে এসে জোরপূর্বক সাদিয়াকে নিয়ে প্রথমে মহেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পে যায়। আর আমাকে আটক করে কালুখালী থানায় নিয়ে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে সার্কেল এসপি লাবিব এসে সাদিয়াকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। পরে একটি কক্ষে হাত-পা বেঁধে আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে। মারতে মারতে দুইটা লাঠি ভেঙে ফেলে। একপর্যায়ে আমি অচেতন হয়ে পড়ি।’
শাহীনের বাবার অভিযোগ, ‘প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে আমার ছেলেকে মারধর করে সার্কেল এসপি থানা থেকে বের হয়ে চলে গেলে আমরা থানায় ঢুকি।ছেলেকে দেখতে চাইলে ওসি শহীদুল ও এসআই শহিদ আমাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন এবং বাড়ি চলে যেতে বলেন। আর বলেন, আপনার ছেলেকে আগামীকাল এসে নিয়ে যাবেন। এর আগে ছেলের জন্য ওষুধ নিয়ে আসতে বলেন। পরে আমরা ছেলেকে রেখেই বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হই। পরদিন বেলা ১১টার দিকে থানার ওসি শহীদুল সাদা কাগজে সই নিয়ে শাহীনকে ছেড়ে দেয়। শাহীনকে আমরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাতে পাই এবং ভ্যানে উঠাতে গেলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল। এরপর তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। সেখানকার চিকিৎসকরা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক জানান। ৩১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমার ছেলে হাসপাতালে ছিল।’তিনি আরও বলেন, ‘এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে শাহীনের কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা করতে পারছি না। পুলিশ আমার ছেলেকে এমন করে মেরেছে। কোনও মানুষ তো কুকুরকেও এমনভাবে মারে না। আমি বিচার চাই।’
শাহীনের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘পুলিশ তো মানুষের উপকারের জন্য। তবে কি গরিব মানুষ বলে আমারা মার খাবো? আমি সরকারের কাছে দোষী পুলিশের বিচার চাই।’শাহীনের বড় ভাই ফরিদ বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আমার ভাইয়ের সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই।কালুখালী থানার এইআই আবু শহিদ জানান, জিডিতে মেয়েটির পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহীনের বাড়ি থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করি এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে থানায় নিয়ে আসি। পরে উভয় পরিবারের মধ্যে কারও কোনও অভিযোগ না থাকায় মেয়েটিকে তারা বাবা-মায়ের হাতে এবং শাহীনকে তার পরিবারের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। কোনও ধরনের মারধর করা হয়নি তাকে।যদিও জিডি করার আগে বা পরে শাহীনের বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয়নি।এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) মো. লাবীব জানান, শাহীনকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থাতেই তার পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে। যেসব অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক নয়। আর যে এক্সরে রিপোর্টের কথা বলা হচ্ছে তা শাহীনের কিনা তা দেখতে হবে।এ বিষয়ে জানতে শাহীনের শ্বশুরের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।