রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার বালিয়াডাঙ্গা মহল্লা। সেখানকার বাসিন্দা কৃষক মো. আবুল কালাম আজাদ। বাড়ির গোয়ালঘরে তার তিনটি গরুর পাশাপাশি ছোট-বড় মিলে সাতটি ছাগল রয়েছে। এর মধ্যে একটি ছাগলের ছয় মাস বয়সী দুটি বাচ্চা। আজাদের চতুর্থ শ্রেণির স্কুলপড়ুয়া মেয়ে মুক্তা আক্তার ওই ছাগলছানা দুটিকে আদর করে ‘মনা-মুন্টু’ নামে ডাকে। গত রবিবার বিকেলে ছাগলছানা মুন্টু এলাকার রাস্তার দুই পাশের মাটিতে গজানো ঘাস খেতে থাকে। এক পর্যায়ে ছাগলছানা দুটি প্রতিবেশি মো. আইনুদ্দিন মোল্লার দেয়ালঘেরা বাসভবনের সামনে যায়। সেখানে গেট খোলা থাকায় ‘মুন্টু’ ওই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে বসত ঘরের বারান্দায় গিয়ে ওঠে। সেখানে উপস্থিত বাড়ির মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী স্টেশন মাস্টার আইনদ্দিন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি ওই ছাগলছানাটিকে লাঠিপেটা করে বাড়ির বাইরে বের করে দেন।
এদিকে লাঠিপেটায় আহত ছাগলছানাটি ছাগলমালিক আজাদের আড়ির আঙিনায় এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তা দেখে শিশু মুক্তা ‘আমার মুন্টুকে বাঁচাও’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। এসময় মুক্তার চিৎকার শুনে তার মা রুবিয়া বেগমসহ আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। অবস্থা বুঝে সঙ্গে সঙ্গে হাতপাখার বাতাস, মাথায় পানি ঢেলে আহত ছাগলছানাটিকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য তারা চেষ্টা চলান। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ‘মুন্টু’ মারা যায়। পরে ওই ছাগল বাচ্চাটি মেরে ফেলার ঘটনা জানাজানি হলে ছাগল মালিকের পরিবারসহ এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি ঘটনার বিচার চেয়ে ছাগলমালিক কৃষক আবুল কালাম আজাদ ওই দিন সন্ধ্যায় মো. আইনদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পরদিন আজ সোমবার দুপুরে আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী রুবিয়া বেগম জানান, চোখের সামনে ছাগলবাচ্চাটিকে এভাবে মরতে দেখে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে তার শিশু মেয়ে মুক্তা। না খেয়ে, না ঘুমিয়ে রাতভর সে শুধু কান্না করেছে। তিনি আরো বলেন, পিটিয়ে না মেরে অবলা ছাগলের ওই বাচ্চাটিকে তারা বেঁধে রাখতে পারতো। এদিকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশু মুক্তা আক্তার বলে, আমার মুন্টুরে যারা পিটাইয়া মারছে, আল্লাই তাগো বিচার করবো। গোয়ালন্দ ঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার বালিয়াডাঙ্গা মহল্লায় লাঠিপেটা করে ছাগল মারার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. আইনদ্দিন মোল্লা বলেন, বাড়ির ভিতর থেকে তাড়ানোর জন্য আমি ছাগলটিকে বাঁশের বাতা দিয়ে আস্তে করে একটি বারি মেরেছিলাম। এতে ছাগলটি মারা যাওয়াওয়ার কথা নয়। প্রচণ্ড গরমের কারণে পেট ফুলে ওই ছাগলবাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।