প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বোনের শরীরে আগুন, গ্রেফতার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২২শে জুন ২০১৯ ০৮:২৭ অপরাহ্ন
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বোনের শরীরে আগুন, গ্রেফতার ২

নরসিংদী জেলা শহরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ফুলন রানী বর্মণ (২০) নামের এক শিক্ষার্থীকে গায়ে ফুফাতো ভাইয়ের পরিকল্পিত ভাবে  কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া রাজু চন্দ্র সূত্রধর নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক লিখিত জবানবন্দি দিয়েছে। শুক্রবার(২১জুন) সন্ধ্যায় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শারমিন আক্তার পিংকির আদালতে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ বর্মণের প্ররোচনায় এ ঘটনায় অংশ নিয়েছে বলে জবানবন্দি দেয়। আর ভবতোষ তাঁর মামা ও অগ্নিদগ্ধ ফুলনের বাবা যোগেন্দ্র বর্মণের জমি সংক্রান্ত বিরোধের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানায়।

আজ শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকির হাসান।  গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুর মহল্লার মৃত কেশব চন্দ্র সূত্রধরের ছেলে রাজু চন্দ্র সূত্রধর (২২), একই এলাকার ফনিন্দ্র বর্মণের ছেলে আনন্দ বর্মণ (২১) কিশোরগঞ্জের ডাংরি এলাকার নারায়ণ বর্মণের ছেলে ভবতোষ বর্মণ। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গত ১৩ জুন রাত পৌনে ৯টার দিকে শহরের পৌর এলাকার বীরপুর বর্মণপাড়ায় নিজ বাড়ির পাশে ফুলন রানী বর্মণ নামের এক তরুণীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় দৃর্বত্তরা। এ ঘটনায় পরদিন তাঁর বাবা যোগেন্দ্র চন্দ্র বর্মন বাদি হয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।  মামলাটি তদন্তভার দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক আবদুল গাফফারকে (পিপিএম, বার)। তিনি ফুলনদের জমি নিয়ে বিরোধ, প্রেমগঠিতসহ নানা দিক সামনে নিয়ে তদন্তে নামেন।

এ ঘটনায় তিনি গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে রাজু সূত্রধর নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেন।পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভবতোষ বর্মণ ও আনন্দ বর্মণকে গ্রেপ্তার করেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজু সূত্রধর আগুন দেওয়ার ঘটনার সম্পৃক্ততা স্বীকার করে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শারমিন আক্তার পিংকির আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।জবানবন্দিতে রাজু জানায়, ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষের প্ররোচনায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভবতোষ তাঁর মামা যোগেন্দ্র বর্মণের জমি নিয়ে প্রতিপক্ষ পার্শ্ববর্তী শুকলাল ও হীরালালকে ফাঁসাতে এ অগ্নিকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে রাজু ফুলনের মুখ চেপে ধরে আর আনন্দ শরীরে কেরোসিন ঢালে। আর ভবতোষ দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল গাফফার বলেন, যোগেন্দ্র বর্মণের দুই মেয়ে দোলন বর্মণ ও ফুলন বর্মণ। এর মধ্যে দোলনের বিয়ে হয়ে গেছে। যোগেন্দ্র বর্মণের কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় বোনের ছেলে ভবতোষ এ বাড়িতেই থাকে। মেয়েদের বিয়ের পর সব সম্পত্তি ভবতোষ ভোগ দখল করবে এ চিন্তায় যোগেন্দ্র বর্মনের সম্পত্তির দেখভাল করতে গিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে সে ঘটনার পরিকল্পনা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে বের হয়ে এসেছে।সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা, সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল গাফফার উপস্থিত ছিলেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব