জনগণকে ঘুষ ছাড়া সেবা দিতে না পারলে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ।বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির চিত্র নিয়ে আয়োজিত এক গণশুনানিতে এ নির্দেশ দেন তিনি।সারোয়ার মাহমুদ বলেন, আমরা এ দেশের জনগণের সেবক। তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের কাজ করে দিতে হবে। না পারলে বলতে হবে কেন পারলাম না।সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণকে সেবা দিতে হবে, ঘুষ ছাড়া সেবা দিতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যান। চাকরি ছেড়ে দেন, আপনার জায়গায় আরেকজন আসবে। কারণ রাষ্ট্রের সঙ্গে, সরকারের সঙ্গে আপনি চুক্তিবদ্ধ।
সারোয়ার মাহমুদ বলেন, দুদক আপনার প্রতিষ্ঠান, দুদক বিদেশ থেকে আসেনি, জনসাধারণকে সেবা দেয়া সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ। কারণ জনগণের করের টাকায় আমাদের বেতন হয়। স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। কাউকে হেয় করার জন্য আমাদের এ আয়োজন না। দুদক আপনাদেরকে শোধরানোর সময় দেবে। প্রথম পর্যায়ে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হবে। এরপর কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পেলে আর ক্ষমা করা হবে না। দুর্নীতিবাজ যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।গণশুনানিতে শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের এক প্রতিবন্ধী নারী (৮২) অভিযোগ করেন, বয়স্কভাতা কার্ড পাওয়ার পর ভাতার জন্য অপেক্ষা করি। যে দিন কার্ড পেয়েছি তারপর মাত্র তিন মাস ভাতা পেয়েছি। বাকি নয় মাস কোনো ভাতা পাইনি আমি।
গণশুনানিতে অংশ নেয়া অনেকেই বিভিন্ন রকম অভিযোগ করেন। প্রতিবন্ধী ওই নারীর অভিযোগের পর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে গত নয় মাস ধরে ওই ইউনিয়নে বরাদ্দ বন্ধ ছিল। আমি আসার পর তা চালু করে সব ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছি।পরে দুদকের ডিজি সারোয়ার মাহমুদ ভাতা না পাওয়ার বিষয়টিতে কারও গাফিলতি এবং অবহেলা আছে কি-না তদন্ত করে সাতদিনের মধ্যে বগুড়ার উপপরিচালককে (ডিডি) প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।গণশুনানিতে অংশ নেয়া ৩৫ জনের মধ্যে কয়েকজন জমি বিক্রির টাকার উৎকোচ দাবি, উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলি, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণসহ নানা কারণে ঘুষগ্রহণ এবং আরও কয়েকটি বিষয়ে দুদকের ডিজির কাছে অভিযোগ করেন।
সব অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদকের ডিজি বগুড়ার উপপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়গুলোর পূর্ণ তদন্ত করে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।গণশুনানিতে আরও বক্তব্য দেন- দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক মোরশেদ আলম, বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞা, শিবগঞ্জ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি রাম নারায়ণ কানু।এতে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু, পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজ্জাকুল ইসলাম রাজু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।