বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ শরনার্থী শিবির উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মাঝে এ দিবস নিয়ে কোন ধারণা নেই। এ দিবসের করণীয় কি তা জানে না জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গারা। এরপরও তাদের দাবি নাগরিক হিসেবে মর্যাদা নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। এ প্রত্যাশার বাস্তবায়ন বাংলাদেশ সরকারের কাছে সহায়তা কামনা করছেন রোহিঙ্গারা। বিশ্ব শরণার্থী দিবস সম্পর্কে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অনেকে বলেছেন, নিপীড়নের শিকার হয়ে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছি। জীবন ধারণের উপকরণসহ সবদিক দিয়ে সুখে থাকলেও মনটা পড়ে আছে রাখাইনে। মাথা উঁচু করে থাকার সুযোগ নিয়ে ফিরে যেতে চাই। আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতা করে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখলে আমাদের ফেরত যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
রোহিঙ্গা আগমন: ১৯৭৮ সালে শুরু। এরপর থেকে কারণে-অকারণে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ আগমন ঘটে। রাখাইনে সহিংস ঘটনায় প্রাণবাঁচাতে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬ কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে রয়েছে। এটি বিশ্বের ইতিহাসে শরণার্থী সংখ্যার সর্বোচ্চ রেকর্ড। মূলত যুদ্ধ, জাতিগত সন্ত্রাসই সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ। রোহিঙ্গারাদের দাবি, শুধু প্রতিবছর শরণার্থী দিবস পালনে তারা অংশীদার হতে চান না। নিজ দেশে ফিরে বাংলাদেশের বোঝা হালকা করতে চান তারা।
উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্প নেতা কলিম উল্লাহ বলেন, প্রাণ রক্ষায় এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতই পাইনা কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না। গরমে রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার। টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের দুদু মিয়া ও নয়াপাড়া ক্যাম্পের শফিউল্লাহ, উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুরুল হাকিম, সেগুপা বেগম, লালু ও ফয়েজ উল্লাহ মাঝিসহ রোহিঙ্গারা বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু চাইলে হবে না, মিয়ানমারকে রাজি হতে হবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলে কেবল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার পথ খুলতে পারে। উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছৈয়দ মো. নোমান বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হওয়া নিয়ে আমরা সন্দিহান। আন্তর্জাতিক কিছু সংগঠন নিজ স্বার্থে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা দেখিয়ে সুবিধা আদায় করছে তারা।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, নানা কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে। বাংলাদেশ- মিয়ানমারের জয়েন ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একাধিক বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। এভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা না গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন দিনও হবে না। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কিছু এনজিও চায় না রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। এ কারণে রোহিঙ্গারা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এসব রোহিঙ্গাদের কারণে এক সময় বাংলাদেশকে এর মাশুল দিতে হবে। কক্সবাজারবাসীও চায় কুটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গাদের একটি স্থায়ী সমাধান। তা নাহলে কক্সবাজারের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
আইএমও'র ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের সকল সংস্থা কেন্দ্রীয় ও ক্যাম্প পর্যায়ে নানা কর্মসূচী পালন করবে। প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পাশে থেকে রোহিঙ্গাদের সকল সুযোগ সুবিধা দিবে আইএমও। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। তাই বিশ্ব শরণার্থী দিবস আমাদের জন্য গুরুত্ববহন করে। শরণার্থীরা দেশের জন্য বিশাল বোঝা। আমরা বিভিন্ন কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছি না। আমরা চাই বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যার সমাধান হউক। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।