১২ টাকার ইনজেকশন ১০০০ টাকা মডেল ফার্মেসিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৪ই মার্চ ২০১৯ ১০:২৪ অপরাহ্ন
 ১২ টাকার ইনজেকশন ১০০০ টাকা মডেল ফার্মেসিতে

নীতিমালা ভঙ্গ করে প্রায় ৯০ গুণ বেশি দামে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজধানীর একটি মডেল ফার্মেসির বিরুদ্ধে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে নাজিয়া ফার্মেসি নামের এই মডেল ফার্মেসিতে ১২ টাকার ইনজেকশন বিক্রি করা হয় ১০০০ টাকায়।জি-ইফিড্রিন নামের ইনজেকশনের প্রস্তুতকারক কোম্পানির প্যাকেটের (পাঁচটির) গায়ে লেখা দাম ৬০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিটির দাম পড়ে ১২ টাকা। এ বিষয়টি নজরে আনলে উল্টো খারাপ ব্যবহার করা হয় ক্রেতার সঙ্গে। এমন অভিযোগ জানিয়েছেন একজন ক্রেতা। এমনকি চাওয়ার পরও তাকে ওষুধ কেনার রসিদ দেওয়া হয়নি।ওই ভুক্তভোগী জানান, রোগীদের দুর্বল সময়ের সুযোগ নিয়ে জি-ইফিড্রিন নামের ইনজেকশনটি বিক্রিতে এই অকর্ম করে যাচ্ছে নাজিয়া ফার্মেসি। অথচ তাদের সাইনবোর্ডে ‘মডেল ফার্মেসি’ সিল দেওয়া।  

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ‘মডেল ফার্মেসি ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প’-এর আওতায় ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ৩৭টি মডেল ফার্মেসি প্রথমবারের মতো যাত্রা করে। মডেল ফার্মেসি হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে কোনো ওষুধ বিক্রি করা যাবে না।এ ছাড়া প্রতিটি মডেল ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে, ক্রেতাদের চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী ওষুধ বুঝিয়ে দেওয়া, ওষুধের গুণাগুণ নিশ্চিত থাকার মতো তাপমাত্রা, চিকিৎসাপত্র সেবা ডেস্ক থাকতে হবে।হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন ফিরোজা বেগম। গত সোমবার (১১ মার্চ) তার অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা একটি জি-ইফিড্রিন ইনজেকশন আনতে বলেন রোগীর স্বজনকে। তার ছেলে লিটন যান হাসপাতালের কাছে মডেল নাজিয়া ফার্মেসিতে। তার কাছে একটি ইফিড্রিন ইনজেকশনের দাম চাওয়া হয় এক হাজার টাকা। তিনি গায়ের দামের কথা জানালে ফার্মেসির বিক্রয়কর্মী সাফ জানিয়ে দেন- ১০০০ টাকাতেই  নিতে হবে। বাধ্য হয়ে লিটনকে ওই দামে ইনজেকশনটি কিনতে হয়। লিটন রসিদ চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন বিক্রয়কর্মী।

লিটনের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে নাজিয়া ফার্মেসির দেওয়া ভিজিটিং কার্ডে থাকা তিনটি মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগস সুপার সৈকত কুমার কর বলেন, ‘এর আগে মিরপুরে এমন ঘটনায় দুটি দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।’ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজের এ-সংক্রান্ত অ্যাপসে ঢুকে ফরম পূরণ করে অভিযোগ জানাতে পরামর্শ দেন তিনি।ওষুধটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস। তাদের বিক্রয়কর্মী রায়হানের কাছে এর দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, জি-ইফিড্রিন ইনজেকশনের দাম তার জানা নেই।জি-ইফিড্রিন ইনজেকশনের দাম সম্পর্কে জানতে এই প্রতিবেদক কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল ও শাহবাগ এলাকায় একাধিক ফার্মেসির লোকজনের সঙ্গে। তারা জানান, ওষুধটি বছরখানেক ধরে বাজারে নেই। কোনো দোকানে এটি পাওয়া গেলে জরিমানা করা হয়। এ কারণে তারা ওষুধটি বিক্রি করেন না। তবে রোগীর লোকজন এসে প্রতিদিন ওষুধটির খোঁজ করেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইফিড্রিন হাইডোক্লোরাইডের কাঁচামাল আমদানি করতে হলে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। তাই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইফিড্রিনের কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে এসিআই, গণস্বাস্থ্য ও ডেল্টা নামের তিনটি কোম্পানিকে ইফিড্রিন হাইডোক্লোরাইড আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কোম্পানি একসঙ্গে ১০ কেজির বেশি আমদানি করতে পারবে না।এ ব্যাপারে জানতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকার ফোন করা হয়। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।