গত ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার বড়বোনের ছেলে ও গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ভুয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তা জি এ সাজ্জাদ হোসেন। এভাবে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে ৫ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা আলিশান বাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি। ব্যবহার করেন ৪৮ লাখ টাকা দামের নিশান এক্স মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি। শুক্রবার (১ মার্চ) রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে আটক করেছে র্যাব। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় র্যাব-৩ এর টিকাটুলি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের সিও (কমান্ডিং অফিসার) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে ঢাকায় আসেন সাজ্জাদ। প্রথমদিকে ক্যান্টনমেন্টের পেছনে ভাসানটেক এলাকায় থাকতেন। সেখানে খোয়া ও বালু সরবরাহের কাজ করতেন। দীর্ঘদিন সেখানে ব্যবসা করার সুবাদে একসময় তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ওই সময় মেজর পরিচয়ে বিভিন্ন অফিসে তদবির করা শুরু করেন। ওই এলাকার ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। র্যাবের সিও বলেন, সাজ্জাদের বাড়ি রংপুরে হওয়ায় এক সময় তিনি নিজেকে ওয়াজেদ মিয়ার বড়বোনের ছেলে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন।
গত তিন থেকে চারবছর এই পরিচয় দেওয়ায় লোকজন তাকে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে বিশ্বাস করতে শুরু করে। লোকজনকে বিশ্বাস করাতে দেশের শীর্ষপর্যায়ের রাজনীতিবীদদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং বিভিন্ন জায়গায় সেগুলো প্রদর্শনও করে। র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কিছু ব্যক্তিকে টার্গেট করেন। তাদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট কিছু গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মনোনয়ন বোর্ড তাদেরকে মনোনয়ন নাও দিতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও ডিজিএফআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে ওই সকল ব্যক্তির গোপনীয় প্রতিবেদন সমূহ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ইতিবাচক করে দিতে পারবেন। এভাবে তিনি বেশকিছু মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয় দিয়ে একজনের কাছে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মূলত তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব অনুসন্ধান শুরু করে। জানা যায়, এভাবে তিনি কোটি কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন। তার সঙ্গে কোনো চক্র জড়িত কি না জানতে চাইলে র্যাব-৩ এর সিও বলেন, আর কেউ তার সঙ্গে জড়িত কি না পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবেন। ডিএমপির কাফরুল থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এরপর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।