নারায়ণগঞ্জে মসজিদ কমিটি ও মসজিদের জমাকৃত টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে সোমবার দিবাগত রাতে দক্ষিণ নলুয়া পাড়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলায় নাসিক ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবীর হোসাইন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নাসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সবাইকেই আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামীদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় উভয় গ্রুপের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অন্যের উপর হামলা করে। এতে অন্তত ২০/২৫ জন আহত হয়। সংঘর্ষের পর কাউন্সিলর কবীর হোসাইন ও কামরুল হাসান মুন্নার পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার সূত্রধরে সদর মডেল থানা পুলিশ সোমবার ভোরে নিতাইগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেন। কামরুল হাসান মুন্না বর্তমানে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক। স্থানীয়রা জানায়, বর্তমান কাউন্সিলর কবীর হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম মুন্নার মধ্যে বহুবছরের পুরোন বিরোধ চলছে। আর কামরুল ইসলাম মুন্না দীর্ঘ ৬ বছর ধরে একক ক্ষমতায় স্বঘোষিত সভাপতি হয়ে মসজিদের নিয়ন্ত্রন করে আসছে। মসজিদের আয়-ব্যায়ের হিসাব নিয়ে একাধিকবার এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের সাথে কথা দিয়েও বুঝিয়ে দেননি মুন্না। এ নিয়ে কাউন্সিলর কবির ও মুন্নার লোকজন ফুঁসে উঠে। এর জের ধরেই এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের দেয়া অনুদানের টাকা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিলো। সাংসদ কত টাকা অনুদান দিয়েছেন তা এলাকাবাসীর কাছে স্পষ্ট করেননি মুন্না। অভিযোগ উঠেছে ওই টাকার হিসাব জানতে চাইলে ওই সময়ে মসজিদে নিয়োজিত মুফতি মাও. রহমানকে মসজিদ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। গত ৩ সপ্তাহ আগে জুম্মার নামাজের পর মসজিদের সাবেক সভাপতি মো. আলী ফালু সর্বশেষ মসজিদ ফান্ডের ১৫ লাখ টাকার হিসাব জানতে চান। যেহেতু ওই টাকা মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা নেই।
তিনি মুসল্লিদের বলেন মসজিদের ব্যাংক হিসাব থাকার পরও মসজিদের কোষাধক্ষ্য ১৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মজিবুর ও মুন্না তাদের নিজের কাছে এ অর্থ রেখেছেন। যার কোন হিসেব নেই। পরে কাউন্সিলর কবির নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি করে এটাকা ব্যাংকে জমা দিতে বললে বিরোধ চরমে উঠে। এরপরই গতকাল সোমবার এশার নামাজের পর মসজিদে এ নিয়ে এলাকাবাসীসহ কাউন্সিলর কবির ও মুন্না উভয়পক্ষ বসে। সেখানে বাকবিতন্ডার পর কবীরের ভাগিনা টিটুকে মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেয় মুন্না পন্থী লোকজন। এঘটনায় উভয় গ্রুপের লোকজনের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় গ্রুপের লোকজনই আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর হামলা চালায়। পুরো এলাকাই রণক্ষেত্রে পরিণিত হয়। চারদিকে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। একটি মামলায় কামরুল হাসান মুন্নার বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এতে অভিযোগ করা হয় মুন্না ধারালো ছুরি দিয়ে কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে। এ মামলায় কামরুল হাসান মুন্না, রকিবুল হাসান লিয়ন, হুমায়ন কবির ও শ্যামল শীলকে আসামী করা হয়। অপর মামলায় কাউন্সিলর কবির হোসেন, বিপু, কালা ফারুখ, আমিন, ওবায়দুল্লাহ, সাহবুদ্দিন, সুজন মিয়া সহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। কবিরের বিরুদ্ধেও ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সেও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে অভিযোগ করা হয় মামলায়। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম জানান, রোববার মধ্যরাতে সংঘর্ষের ঘটনায় কবীর হোসাইন ও কামরুল হাসান মুন্নার পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হয়েছে। সবাইকেই আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। উভয় মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিশৃঙ্খলাকারী যে যত বড় ক্ষমতাবান হোক তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।