খালেদাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:২৩ অপরাহ্ন
খালেদাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের আবেদন

চট্টগ্রাম বন্দর ও কমলাপুর আইসিডিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগসংক্রান্ত গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে আজ বৃহস্পতিবার এই আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।শুনানির আগে বেলা ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এর চার মিনিট পর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে মামলায় আলামত জব্দ করার কাগজপত্র পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

বিচারক তখন দুদকের আইনজীবীকে অভিযোগ শুনানি করতে বলেন। এরপর বেলা ১২টা ৫৫ মিনিট থেকে প্রায় দুইটা পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান মোশাররফ হোসেন কাজল।দুদকের আইনজীবী বলেন, ২০০৩ সালের ১ মার্চ তৎকালীন সরকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা আইসিডি টার্মিনাল এবং চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল শুধু অভিজ্ঞ ইকুইপমেন্ট ওনার্স, ইকুইপমেন্ট সাপ্লায়ার্স, ইকুইপমেন্ট ইউজারস, ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং ফার্ম এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বন্দর ব্যবহারকারীরা টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে। শর্তানুযায়ী টেকনিক্যাল বিডের মধ্যে সংশ্লি¬ষ্ট কোম্পানি ও এর পরিচালকদের সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতার দলিল অবশ্যই থাকতে হবে এবং অভিজ্ঞতা সংবলিত প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।

কিন্তু ইকুইপমেন্ট-সংক্রান্ত কোনো সম্পৃক্ততা ও বন্দর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বনানীর জি ব্ল¬কের ৭ নম্বর রোডের ৪৩ নম্বর বাড়ির গ্লে¬াবাল এগ্রো ট্রেড কোম্পানিকে (গ্যাটকো) কাজ দেয়া হয়। এ জন্য তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রীর ছেলে সায়মন ও তার মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে নিয়মিত অবৈধ অর্থ প্রদান করা হয়। গ্যাটকোর পরিচালকদের কারোই টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট ও হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা শাহজাহান এস হাসিব নামের এক ব্যক্তিকে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দেখিয়ে টেন্ডারের শর্ত পূরণের চেষ্টা চালান।আইনজীবী কাজল বলেন, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তসহ অন্যান্য আলোচ্যসূচির সিদ্ধান্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে তিনি ‘আলোচ্য বিষয়-৩ সংক্রান্ত সুপারিশ অনুমোদন ছাড়া অবশিষ্ট সুপারিশগুলো অনুমোদন করা হল’ মর্মে ২০০৩ সালের ৬ ডিসেম্বর সই করেন। বিষয়টি জেনেও মন্ত্রিসভা ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা কোনো আপত্তি তোলেননি।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলায় গ্যাটকোর অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতাজনিত কারণে ঢাকা আইসিডি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার আইসিডির কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বিভিন্ন সময়ে বিলম্বের কারণে সরকারের এক হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়।তিনি বলেন, গ্যাটকোকে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে আরাফাত রহমান কোকো ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের পুত্র সায়মনকে ওই কাজ প্রাপ্তির শর্ত অনুযায়ী বিভিন্ন তারিখে আনুমানিক ২ কোটি ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯১ টাকা দেয়া হয়।আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ৪০৯, ১০৯ এবং ৫ (২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করার প্রস্তাব করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। তার শুনানি শেষে আদালত আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের শুনানির তারিখ ঠিক করেন।

এদিকে এদিন গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব অসুস্থ থাকায় আদালতে হাজির হতে না পারায় সময় আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।বেলা দুইটার দিকে মামলার কার্যক্রম শেষে খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।