প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৯
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে অবশেষে সরকার বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব মরিয়ম মিতুর সই করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আগামী ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে শিক্ষকদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা প্রদান করা হবে। তবে সর্বনিম্ন ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিদ্যমান বাজেট সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এটি জাতীয় বেতন কাঠামোর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করা হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, বাড়িভাড়া ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে এমপিও নীতিমালার শর্তাবলী মেনে চলা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি, ভাতা প্রদানের সময় কোনো ধরনের বকেয়া বেতন বা ভাতা হিসাব করা যাবে না। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক বিধি-বিধান সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যদি ভাতা সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষই তার দায়ভার বহন করবেন।
সরকারি এই আদেশে ভাতা প্রদানে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় বেতনস্কেলের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে ভাতা সমন্বয়, বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ, এবং অর্থনৈতিক নিয়ম-কানুন মেনে চলা। এতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও ভোকেশনাল) শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও নীতিমালা-২০১৮ ও ২০২১ অনুসরণের নির্দেশনাও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষকরা মূল বেতনের ওপর বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত আগস্টে তারা রাজধানীতে এক মহাসমাবেশ করে এই দাবির পক্ষে জোরালো আন্দোলন করেন। তাদের যুক্তি ছিল, ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে নির্ধারিত ভাতা দিয়ে কোনোভাবেই টিকে থাকা সম্ভব নয়।
কিন্তু শিক্ষকদের এই দাবি উপেক্ষা করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। এতে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে এবং শিক্ষকরা ঘোষণা দেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা ক্লাস বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
পরবর্তীতে ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সরকারকে বাড়িভাড়া ভাতা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। তারা বলেন, শিক্ষা পেশাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ন্যায্য ভাতার ব্যবস্থা করতেই হবে।
অবশেষে সরকার শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয়। তবে শিক্ষক নেতারা বলছেন, এটি তাদের আংশিক সাফল্য। তারা মূল বেতনের ওপর আরও বেশি হারে বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণের দাবি অব্যাহত রাখবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের দাবি আংশিকভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী বাজেট প্রণয়নে তাদের আরও কিছু দাবি বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।