জমাদিউস সানি মাসে ইবাদাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৮শে নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
জমাদিউস সানি মাসে ইবাদাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। এটি আরবি মাসের দ্বিতীয় শীতকালীন মাস এবং এর জোড়া মাস হলো জমাদিউল আউয়াল, যা হিজরি সনের পঞ্চম মাস। "জমাদিউস সানি" (جُمَادَىٰ الآخِرَة) বা "জমাদাল আখিরা" এর বাংলা অর্থ হলো দ্বিতীয় জুমাদা বা দ্বিতীয় শীত। অর্থাৎ এটি শীতকালের দ্বিতীয় মাস হিসেবে পরিচিত, যখন শীতকাল তার শেষ পর্যায়ে চলে আসে। এই মাসের প্রথম ভাগে শীতের প্রকোপ থাকে এবং শেষ দিকে গরমের প্রারম্ভ ঘটে।


আরবিতে এই মাস দুটি ‘আল-জুমাদাল উলা’ (প্রথম জুমাদা) এবং ‘আল-জুমাদাল উখরা’ (দ্বিতীয় জুমাদা) নামে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে এগুলিকে ‘জমাদিউল আউয়াল’ এবং ‘জমাদিউস সানি’ হিসেবে বেশি জানা যায়। এই নামগুলি আরবি ভাষার ‘জুমাদা’ শব্দ থেকে এসেছে, যার আভিধানিক অর্থ ‘শীতকাল’, ‘নিস্তব্ধ’, ‘অবিচল’, ‘কঠিন’, ‘জমাটবদ্ধ’ ইত্যাদি। শীতকালে তীব্র শীতের কারণে পানি জমে বরফে পরিণত হয় এবং জীবজন্তু, উদ্ভিদ এক প্রকার নিস্তেজ ও স্থির হয়ে পড়ে, তাই এই মাসের নাম রাখা হয়েছে "জমাদা"।


ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘জুমাদা’ হলো শীতকাল, যা বসন্তের আগে এবং গ্রীষ্মের পূর্ববর্তী সময়ে অবস্থান করে। এই মাসটি ‘জুমাদায়ান’ বা ‘জুমাদায়িন’ নামে উল্লেখিত, যার অর্থ ‘দ্বিতীয় জুমাদা’ বা ‘জুমাদাদ্বয়’।


জমাদিউস সানি মাসে নেক আমলের ফজিলত

জমাদিউস সানি মাসেও অন্যান্য মাসের মতো নেক আমল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে নফল নামাজ ও নফল রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। বিশেষ করে, তাহাজ্জুদ নামাজ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল, আউওয়াবিন নামাজ এবং কাজা রোজা আদায় করার জন্য এই মাস অত্যন্ত উপকারী।


এছাড়াও, এই মাসের ১, ১০, ২৯ ও ৩০ তারিখে রোজা রাখা এবং চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে ‘আইয়ামে বিদ’ বা সুন্নাত রোজা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রজব মাসের প্রস্তুতি হিসেবে এই মাসে নফল নামাজ এবং রোজার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,  

“যিনি রাতের মূল্য দেন, প্রতি রাতকেই তিনি শবে কদর হিসেবে পান।”  

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নিয়মিত নেক আমল করে, তার জন্য প্রতিটি রাতই শব-ই-কদর হয়ে ওঠে।


এই মাসের ফজিলত লাভ করার জন্য জিকির, দোয়া, দরুদ ও সালাম, তাসবিহ তাহলিল, তাওবা ও ইস্তিগফার, খতম তিলাওয়াত, সদকা ও খয়রাত ইত্যাদি আমল করা উচিত। যে ব্যক্তি এইভাবে ইবাদত করবে, তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান ফজিলত ও বরকত প্রাপ্তি হবে।


রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,  

“নেককার মুমিন জান্নাতে কোনো আফসোস করবে না, তবে তারা আফসোস করবে সেই সময়ের জন্য, যা তারা নেক আমল ব্যতিরেকে নষ্ট করেছে।” (তিরমিজি)


জমাদিউস সানি মাসের মত যেসব মাস ও দিবসে বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলিতে আমল করার গুরুত্ব অনেক বেশি। এই মাসে ইবাদত করা সারা বছরের তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ হতে পারে, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়। কোরআন ও হাদিসে বিশেষ দিন ও মাসে ইবাদত করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, কারণ এমন আমল মানুষকে আল্লাহর নিকট আরো নিকটবর্তী করে এবং পারলৌকিক সফলতা অর্জনে সহায়ক হয়।


কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা বলেন,  

“যেহেতু কুরাইশদের আসক্তি আছে, তাদের আসক্তি শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তারা এই (কাবা) গৃহের প্রভুর ইবাদত করুক। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেছেন।” (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ১-৪)


এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা কুরাইশদের শীত ও গ্রীষ্মের ভ্রমণ সম্পর্কে কথা বলেছেন, যেখানে তারা আল্লাহর ইবাদত করার জন্য কাবার দিকে মনোনিবেশ করতেন। তাই আমাদেরও শীত ও গ্রীষ্মকালীন সময়ে ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নেকির বরকত লাভ করতে হবে।