পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ছাড়পত্র (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) প্রয়োজনীয়তা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা পরিষেবা বিভাগ (এসএসডি) সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণে আরোপিত এই শর্তটি তুলে নেওয়া বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নীতিগত পরিবর্তন বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থানে একটি বড় পরিবর্তনের সংকেত বহন করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।
দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত; সম্প্রতি বাংলাদেশ করাচি থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি কার্গো জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এটি দুই দেশের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার আরেকটি উদাহরণ। পাকিস্তানের হাই-কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফের ঢাকায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং এর পরপরই ভিসা প্রক্রিয়ার সহজীকরণ নীতির পরিবর্তন কাকতালীয় নয় বলে মনে করছেন অনেকে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্র নীতিতে ভারতকেন্দ্রিক মনোভাব স্পষ্ট।
ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ ঃ বাংলাদেশের ভিসা নীতির এই পরিবর্তন ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি ভারত-বাংলাদেশ কূটনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ আনতে পারে।
সিডনি পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মুবাশার হাসানের মতে, বাংলাদেশ এখন ভারতকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি নতুন দিক উন্মোচন করছে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত হলে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে চরমপন্থি গোষ্ঠীর কার্যক্রম বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই নীতিগত পরিবর্তন বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও গতিশীল এবং ভারসাম্যমূলক করার সংকেত দিলেও, এটি প্রতিবেশী দেশের জন্য একটি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবেও আবির্ভূত হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।