ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে কূটনৈতিক অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:৩৪ অপরাহ্ন
ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে কূটনৈতিক অনিশ্চয়তা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। গত ৫ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার প্রত্যাবর্তনের জন্য নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই নোট গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।  


গণআন্দোলন দমনে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্ট করেছে, তিনি দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।  


এ প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত মহেশ সাচদেব ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইকে বলেন, “বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তির বিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক অপরাধে দোষী সাব্যস্তদের ফেরত দেওয়া কঠিন। শেখ হাসিনা এই চুক্তির আওতায় আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। একইসঙ্গে ভারতের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত হওয়া জরুরি যে, তার সঙ্গে ন্যায়বিচার করা হবে।”  


শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার বিষয়ে ভাবছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।  


মহেশ সাচদেব বলেন, “শেখ হাসিনার অবস্থান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জটিলতা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তার প্রত্যাবর্তন চাইলেও ভারতের পক্ষে এই অনুরোধ রাখা সহজ নয়। এর কারণ হিসেবে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর উদাহরণ টেনে বলেন, ‘অনেক সন্ত্রাসী ইউরোপে আশ্রয় পেয়েছে এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কারণ ইউরোপ তাদের বিচারব্যবস্থার মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।’”  


ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তি ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০১৬ সালে তা সংশোধন করা হয়। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় চুক্তি বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ছে।  


সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের মতে, শেখ হাসিনার দেশে ফিরে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তিনি আরও যোগ করেন, “কিছু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পদক্ষেপও এই পরিস্থিতিতে জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক নীতি মেনে চলছে।”  


বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই সংকট সমাধানে উচ্চতর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ভারতে কতদিন অবস্থান করবেন, সে বিষয়ে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।