দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ: প্রতিমাসে অপচয় ১৮ লাখ কর্মঘণ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৪ঠা নভেম্বর ২০২১ ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ: প্রতিমাসে অপচয় ১৮ লাখ কর্মঘণ্টা

দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌপথ। এছাড়াও দুর্ভোগের অপর নাম দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া নৌপথ। এই নৌপথে দুর্ভোগ বিহীন নদী পার হওয়া বেশ অসম্ভব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে নদী পারা হতে হয় বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের। এই নৌপথ ব্যবহারকারী যানবাহন চালক, যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের মূলবান কর্মঘণ্টা অপচয় হয়ে যায় উভয় ঘাটে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার কর্মঘণ্টা অপচয় হয়।


বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৭৮৭টি ট্রাক দৌলতদিয়া থেকে নদী পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসে ৭৮৭টি ট্রাক। যাত্রীবাহী ৬০৬টি বাস দৌলতদিয়া থেকে নদী পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসে ৬০৬টি বাস। প্রাইভেটকার- মাইক্রোবাস, পিকআপ, দেড়টনের ২৩'শত গাড়ী দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়া আসে ২৩'শত গাড়ী।


অর্ধশত ট্রাক-বাস ও পিকআপ চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ট্রাক দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে গড়ে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করে নদী পারাপার হয়। যাত্রীবাহী বাস গড়ে ৩ঘণ্টা অপেক্ষা করে নদী পারাপার হয়। পিকআপ, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস গড়ে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করে নদী পারাপার হয়।


সেই হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় ট্রাক চালকের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ফেরি ঘাটে ৩৭ হাজার ৭শত ৭৬ কর্মঘণ্টা অপচয় হয়। যাত্রীবাহী বাস ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৬শত ৩৬ কর্মঘণ্টা অপচয় হয়।


প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস ও পিকআপের ১৩ হাজার ৮শত কর্মঘণ্টা অপচয় হয়। সব মিলে প্রতিদিন ৬০ হাজার কর্মঘণ্টা দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া উভয় ঘাটে অপচয় হয়। বর্তমানে

এই নৌপথ ব্যবহার করা যানবাহন চালক, যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। সেই হিসেব অনুযায়ী প্রতি মাসে ১৮ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হয়। বছরে ২ কোটি ১৬ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হয়।  


এই প্রতিবেদন তৈরি করতে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট অফিসের রেজিষ্টার্ড খাতা সূত্রে ২৩ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদন গড়ে ৪২'শত বিভিন্ন প্রকার যানবাহন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। সেই হিসেবে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরি পার হয়ে দৌলতদিয়া আসে ৪২'শত বিভিন্ন প্রকার যানবাহন।


দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ঘাট এলাকা সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায়, কর্মঘণ্টা অপচয় হওয়ার মূল কারণ ফেরি ঘাটে অব্যবস্থাপনা, মহাসড়কে সিরিয়াল অমান্য, ফেরি সংকট, নদীতে নাব্যতা সংকট, অতিরিক্ত স্রোত এবং ঘন কুয়াশা। সমস্যাগুলো মুখোমুখি হয়ে প্রতিনিয়ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করতে হয় যানবাহন চালক, যাত্রী ও ব্যবসায়ী সহ নানাভিদ লোকদের।


একাধিক যানবাহন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের বেশির ভাগ সমস্যাগুলো কৃত্রিম। অনৈতিক সুযোগ-সুবিধার জন্য ঘাট সংশ্লিস্টরা এমন যানজটের সৃষ্টি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করে। তবে কিছু কিছু সমস্যা প্রাকৃতিক ও ফেরি সংকট রয়েছে।


এসময় সাদ্দাম নামের এক পণ্যবাহী ট্রাক চালক জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের দালাল থেকে শুরু করে ঘাট সংশ্লিষ্ট সবাই অর্থনৈতিক সুবিধা নেয়। সুবিধা না দিলে দুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুন বেড়ে যায়।


গোয়ালন্দ রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর কাদের বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। আর কর্মঘণ্টা অপচয় হওয়ায় দেশের উন্নয়নের বাঁধাগ্রস্ত হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় সাধারণ মানুষেরও। সুতরাং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহারকারী যানবাহন এসেই সহজে ফেরি পার হতে পারলে কর্মঘণ্টা বেঁচে যাবে। দেশ আরও উন্নয়ন হবে।


বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোঃ শিহাব উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করে গড়ে প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে বিভিন্ন প্রকার ৪২'শত যানবাহন যায়। তিনি আরও জানান, শিমুলিয়া-বাজার নৌরুট বন্ধ থাকার কারণে প্রতিনিয়ত দৌলতদিয়া ঘাটে কিছু যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকে।