প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২১, ২২:৩৫
ঘুম ভাঙার আগেই ভেঙে যাচ্ছে মানুষের স্বপ্ন। চোখের সামনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা। নদী ভাঙনের শব্দে ঘুম ভাঙছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার পদ্মা পারের কয়েক শত অসহায় পরিবারের। নিরুপায় হয়ে বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে অন্যত্র যেতে হচ্ছে এ সকল মানুষের।
রাজবাড়ীর সদর উপজেলার মিজানপুর ও বরাট ইউনিয়নের গোদারবাজার অংশে কংক্রিট দিয়ে নির্মিত সিসি ব্লকের ১৫০ মিটটার অংশে ব্যাপক ভাঙনের পর শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকাল থেকেই গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফেরিঘাট এলাকায় দ্বিতীয় দফায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভাঙনে নদী তীরবর্তী প্রায় ৩০মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে শত শত বসতবাড়ী। ভাঙন আতঙ্কে নদীপার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে তাদের ঘরবাড়ী।
ভাঙন প্রতিরোধে অনেক আকুতি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি সহ নানা কর্মসূচী পালন করা হলেও কার্যত ভাঙন রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ১নং ফেরিঘাটের এলাকায় মজিদ শেখর পাড়ার ৩০মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হওয়া ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের মজিদ শেখের পাড়ার থেকে আবু মেম্বার, আবুল মন্ডল, সোহেল মুন্সী, মোকছেদ মন্ডল, উজ্জল সরদারের বাড়ী সহ বেশ কিছু বাড়ীঘর সরিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মো. আজিজুল হক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোস্তফা মুন্সী, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: রফিকুল ইসলাম, দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আঃ রহমান মন্ডল।
ভাঙন কবলিত স্থানীয় বাসিন্দা চাঁন্দু মোল্লা বলেন, অব্যাহত পদ্মার ভাঙন রোধে কার্যকরি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। কয়েক বছর ধরে শুনে আসছি ভাঙন রোধে কাজ করা হবে কিন্তু কিছুই হয়নি। এমন ভয়াবহ ভাঙন ঠেকানো না গেলে পুরো দৌলতদিয়াই নদীগর্ভে চলে যাবে। হয়ত মানচিত্র থেকে চলেই যাবে দৌলতদিয়ার নাম।
স্থানীয় কাসেম মন্ডল বলেন, কয়েক বছর পূর্বে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে ছিলো পদ্মা নদী। সেখান থেকে শুনে আসতেছি ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। বালুর বস্তা ছাড়া এখানে কোন কাজ হয়নি। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের নদী ভাঙন থেকে বাঁচান।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আঃ রহমান মন্ডল বলেন,দৌলতদিয়ার লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট ও ঘাট সংলগ্ন কয়েকটি গ্রাম এবং ঘাটের উজানে আরো কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। ঘাটগুলো ছাড়াও হুমকিতে রয়েছে বহু পরিবার। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুল হক বলেন, আমি ভাঙন পরিস্হিতি সরেজমিন দেখে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি।আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।