কাশ্মীরিদের ‘নতুন দিনের’ স্বপ্ন দেখালেন মোদি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৮ই আগস্ট ২০১৯ ১০:৪৮ অপরাহ্ন
কাশ্মীরিদের ‘নতুন দিনের’ স্বপ্ন দেখালেন মোদি

সহজাত ভঙ্গিমা আর সেই পুরোনো টোন। কিছুটা থেমে থেমে, কিছুটা টেনে টেনে। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় বৃহস্পতিবার রাতে দূরদর্শনের পর্দায় এভাবে হাজির হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে বক্তব্যের শুরু থেকে কাশ্মীরিদের ‘নতুন দিনে’র স্বপ্ন দেখাতে চাইলেন তিনি।কাশ্মীর আর লাদাখবাসীদের ‘ভাই-বোন’ সম্বোধন করে মোদি বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটার ভাষণে বলেন, ‘কাশ্মীরের ভাইবোন অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের এখন থেকে সব মিলবে। জম্মু-কাশ্মীরে উন্নয়নের যে বাধা ছিল, সেটি দূর হয়েছে।’গত সোমবার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করে ভারতের অধীনে থাকা জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। মোদি মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত ভারতীয়দের জন্য ঐতিহাসিক।

‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি, অটল বিহারি বাজপেয়ি, সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সত্যি হয়েছে কোটি কোটি ভারতীয়র স্বপ্ন। আমি জম্মু-কাশ্মীরের লোকদের অভিনন্দন জানাই।’সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করার কারণে এখন থেকে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই টুকরো করে লাদাখকে বের করে তৈরি করা হবে নতুন এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা থাকছে না। তবে তার বিধানসভা থাকবে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পরিচালিত করবেন দুই লেফটেন্যান্ট গভর্নর।কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বলতে সরাসরি ভারত সরকার এই অঞ্চলের সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে। ভারতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চণ্ডীগড়, দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন ও দিউ, লাক্ষাদ্বীপ, পণ্ডিচেরি এবং দিল্লির জাতীয় রাজধানী অঞ্চল।

এসব অঞ্চল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার-ব্যবস্থার একটি উপ-রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক বিভাগ। অন্য রাজ্যের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নিজস্ব নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই। এই অঞ্চলগুলো সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শাসিত হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রত্যেক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একজন করে প্রশাসক অথবা লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করে থাকেন।রাজ্যটির বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার যুক্তি দিতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘আপনারা জেনে অবাক হবেন যে জম্মু-কাশ্মীরের অনেক মানুষ এখনো স্থানীয় নির্বাচনে ভাট দিতে পারেন না। দেশভাগের পর তারা ভারতে এসেছিল। দেশের অন্য সব জায়গায় তারা সাধারণ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন। কিন্তু কাশ্মীরে পারেন না।’

মোদি জানান তাদের এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নয়। কয়েক মাস ধরেই কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীর পরিচালনা করছে, ‘কাশ্মীরের প্রশাসন গত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। তখন থেকেই উন্নয়ন আর ভালো প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিষ্কার হয়েছে। যেসব প্রজেক্ট কয়েক দশক ধরে ঝুলে ছিল, তা দ্রুত কার্যকর হয়েছে।’জম্মু-কাশ্মীরে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন মোদি, ‘এখন থেকে জম্মু-কাশ্মীরের লোকজন তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন। আমি নিশ্চিত এই সব চেষ্টা উপত্যকা থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করবে।’ধীরে ধীরে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ঈদের সময় সেখানে কোনো ঝামেলা থাকবে না।’জম্মু-কাশ্মীরকে আলাদা করার কারণে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছে পাকিস্তান। ইমরান সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ‘শয়তানি সিদ্ধান্ত’ বলেন মোদি।জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ একসঙ্গে পাকিস্তানের শয়তানি সিদ্ধান্তকে পরাজিত করবে।’অঞ্চলটিকে ‘ভারতের মুকুট’ আখ্যায়িত করে মোদি সেখানকার মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে ‘জনতার শক্তি’ পৃথিবীকে দেখানোর, ‘আসুন, পৃথিবীকে দেখিয়ে দিন জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের শক্তি। চলুন নির্মাণ করি এক নতুন কাশ্মীর।’