প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.): বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: বুধবার ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২২ পূর্বাহ্ন
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.): বিশ্ববাসীর জন্য রহমত

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, বিশেষ করে মুসলিম উম্মতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান রহমত। আল্লাহ পাক সুরা ইউনূস-এর ৫৮ নম্বর আয়াতে নির্দেশ দেন, “আপনি বলে দিন আল্লাহর ফজল ও রহমতের জন্য তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে।” এখানে আল্লাহর রহমত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। আল্লাহ পাক আরও বলেন, “আমি আপনাকে সারা জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)।


নবীজি ছিলেন এক অসাধারণ নেতা এবং মানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ। তিনি সারা জীবন উম্মতের কল্যাণ কামনায় কাজ করেছেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। নবীর দয়ালু ও দরদী স্বভাবের কারণে উম্মতরা তাঁকে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে গ্রহণ করেছিল। নবীজি সর্বদা চিন্তা করতেন কিভাবে তার উম্মত ঈমানদার হয়ে ইহকালে শান্তি এবং পরকালে মুক্তি লাভ করতে পারে।


কোরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমাদের মধ্যে এসেছেন এমন একজন রাসুল, যিনি তোমাদের দুঃখকে অত্যন্ত দুঃসহ মনে করেন, তিনি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী এবং বিশ্বাসীদের প্রতি দয়াময়।” (সূরা তওবা: ১২৮)। হযরত ইবনে আস (রা.) এর একটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবীজি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, “আল্লাহুম্মা উম্মতি উম্মতি”—অর্থাৎ, “হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করছি।” (সহিহ মুসলিম)।




নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে দয়া, মমতা এবং ভালোবাসার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। তিনি ছিলেন এক অসাধারণ মানবিক চরিত্রের অধিকারী। যখনই উম্মতের কষ্ট বা দুঃখ-দুর্দশা দেখা যেত, তিনি ছিলেন সর্বদা তাদের পাশে। মসজিদে নববীতে আসহাবে সুফফা ছিলেন ৭০ জন সাহাবি, যারা নবীজির কাছে থেকেই ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো শিখতেন এবং তাঁর নিকট থেকে দয়ালু ও মানবিকতার শিক্ষা লাভ করতেন।




নবীজি মৃত্যুর পরও তাঁর উম্মতের জন্য আশ্রয়স্থল। হজরত আলী (রা.)-এর এক বিবরণ অনুযায়ী, নবীর দাফনকার্যের সময় এক বেদুঈন এসে নবীজির কবরে দাঁড়িয়ে বলছিল, “হে রাসুলুল্লাহ (সা.), আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি, কিন্তু আপনি তো চলে গেছেন। এখন আমি কোথায় যাব?” তখন কবর থেকে আওয়াজ এলো, “যাও, তোমাকে ক্ষমা করা হয়েছে।” (শাওয়াহেদুন নবুয়ত)।


### নবীর সুপারিশের শক্তি


প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) কিয়ামতের দিন তাঁর উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছিলেন, “হাশরের দিন যখন আমার উম্মত আটকা পড়বে, তখন আমি হব তাদের সুপারিশকারী।” (মিশকাত)। নবীজির সুপারিশের জন্য উম্মতরা দৌড়াবে, এবং তিনি আল্লাহর কাছে তাদের পক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।



আল্লাহ পাক কোরআনে বলেছেন, “আপনার পালনকর্তা আপনাকে এত প্রাচুর্য দিবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হবেন।” (সুরা দুহা: ৯৩)। নবীজি বলেছিলেন, “আমি তখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট হব না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উম্মতের একজনও জাহান্নামে থাকবে।” (কুরতুবী)। নবীজির এ দয়ালু মানসিকতা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, তিনি তাঁর উম্মতের জন্য সর্বদা চিন্তিত।



বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের জন্য মুহাম্মদ (সা.) হলেন রহমতের এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর জীবনে থাকা দয়া, মমতা ও মানবিকতা আমাদেরকে শেখায় কিভাবে একে অপরের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হয়। নবীজি শুধু একটি যুগের জন্য নন, বরং সারা মানবতার জন্য পথপ্রদর্শক। তাঁর আদর্শ আমাদেরকে নির্দেশনা দেয় কিভাবে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে হয়।


আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।