ঝিনাইদহে পাইপ লাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস, ১০ বছরেও আবেদন করেনি কেউ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আতিকুর রহমান, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: রবিবার ১২ই মে ২০২৪ ০৭:২১ অপরাহ্ন
ঝিনাইদহে পাইপ লাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস, ১০ বছরেও আবেদন করেনি কেউ!

শিল্পকারখান ও বাসাবাড়িতে রান্নার জন্য গ্যাসের জন্য এক সময় ঝিনাইদহের মানুষ আন্দোলন করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গ্যাস লাইন নির্মানের জন্য সংসদে দাবীও তুলেছিলেন। অথচ সেই প্রাকৃতিক গ্যাস, পাইপ লাইনের মাধ্যমে ঝিনাইদহে এসেছে ২০১৪ সালে। গ্যাস আসার পর ঝিনাইদহের কোন জনপ্রতিনিধি সংসদে শিল্পকারখান ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহের জন্য কথা বলেননি, করেননি কেউ আন্দোলন। ইতিমধ্যে একই লাইনের গ্যাস কুষ্টিয়ার কয়েকটি শিল্পকারখানায় সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।


গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেডের ঝিনাইদহ টাউন বর্ডার স্টেশনের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী ব্যাবস্থাপক মীর মোবাশ্বের আলী মিন্টু জানান, ২০০৯ সালে গোটা দক্ষিানাঞ্চলে গ্যাস লাইন স্থাপনের পস্তাব পাশ হয়। ২০১১ সাল থেকে এ অঞ্চলে জমি অধিগ্রহন শুরু হয়। জমি অধিগ্রহন ও ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের ৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। 


কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও শৈলকুপার ৫২টি মৌজা থেকে ২৬ ফুট জায়গা নিয়ে মোট ১১৭ একর জমি অধিগ্রহন গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড।তিনি জানান, ঝিনাইদহ জেলার উপর দিয়ে ৫২ কিলোমিটার গ্যাস লাইন তৈরী করা হয় এবং ২০১৪ সালে গ্যাস পাইাপ লাইন তৈরী শেষে পাইপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এখন পাইপে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুদ রয়েছে।


গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেডের একটি সুত্র জানায় ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার কোন ইচ্ছা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নেই কোন উচ্চবাচ্য। তবে কুষ্টিয়ার বিআরবি কেবল ও খুলনার কিছু ব্যবসায়ী তাদের কলকারখানায় গ্যাস লাইন নিয়েছে বলে ওই সুত্র জানায়।


তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সরকারী নির্দেশনা মতো শুধু শিল্প কলকারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই সাথে টাউন বর্ডার স্টেশনের পাশে একটি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংযোগ প্রদানের নিয়ম রয়েছে। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ কম টাকায় সিলিন্ডারে ভরে গ্যাস বাসাবাড়িতে ব্যবহার করতে পারবেন।


ঝিনাইদহে গ্যাস সংযোগের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেডের খুলনা ও ভেড়ামারার ইনচার্জ সুমন মল্লিক জানান, গ্যাস সরবরাহ করা আমাদের দায়িত্ব না, এই কাজটি করে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল)। তিনি বলেন আমার জানামতে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানী ঝিনাইদহে কাজ শুরু করেছে। তারা ঝিনাইদহ বিসিক, যশোর অভয়নগর, নড়াইল অর্থনৈতিক অঞ্চল ও খুলনা বিসিক এলাকায় গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য কাজ শুরু করেছে।বিষয়টি নিয়ে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীর কোন কর্মকর্তা গনমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।


বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক সেলিনা রহমান জানান, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীর কর্মকর্তারা ঝিনাইদহে এসেছিলেন। তারা ডিপো করবে বিসিক থেকে অনেক দুরে। সেখান থেকে গ্যাস লাইন বিসিক পর্যন্ত আনতে ব্যবসায়ীদের নিজেদের অর্থ ব্যয় করতে হবে। এতে ব্যবসায়ীরা রাজি হননি।


তিনি আরো জানান, আমরা সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীকে বলেছি ডিপোটা বিসিকের আশেপাশে করতে। নিকটে গ্যাসের ডিপো করা হলে বিসিকের সব ব্যাবসায়ীরা গ্যাস নিতে পারবে বলে তিনি জানান।


এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনের সভাপতি অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝিনাইদহে স্থাপিত বিসিক শিল্পকারখানাসহ বাসা বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে বিদ্যুতের উপর যেমন চাপ কমতো, তেমনি মানুষের জীবনমানও আরো উন্নত হতো। তিনি বলেন ঝিনাইদহে যে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ লাইন আছে তা তো অনেকেই জানেন না।


উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে গ্যাস সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ-২-এর আওতায় খুলনাঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর প্রথম অংশে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পয়েন্ট থেকে সিরাজগঞ্জ, নাটোরের বনপাড়া ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৪১ কিলোমিটার এবং এর দ্বিতীয় অংশে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে ঝিনাইদহ যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করা হয়।