যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বাইডেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ২০শে জানুয়ারী ২০২১ ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বাইডেন

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত পার হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রবাসী। মঙ্গলবার দিনটি ছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপধান হিসেবে শেষ দিন। ‘পাগলা প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ট্রাম্পের দিকেই মার্কিনীদের চোখ।


শেষ দিনটি পার করে তিনি কিভাবে ছেড়ে যাচ্ছেন শক্তিধর রাষ্ট্রটির ক্ষমতার মসনদ। যদিও কেতা অনুযায়ী এদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পূর্বসূরীদের মতো শতাধিক ব্যক্তিকে ক্ষমা ঘোষণা করবেন।এর আগে এমন নজিরবিহীনভাবে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিতর্ক নিয়ে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হয়নি। ‘অ্যামেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’


স্লোগানে ২০১৬ সালের নির্বাচন জিতে আসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের প্রশাসনকেই কার্যত এলোমেলো করে রেখে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে ‘প্রায় সব চ্যালেঞ্জ’ নিয়েই অভিষেক হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট যোশেফ রবিনেড বাইডেনের। আজ ২০ জানুয়ারি বাইডেন আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিবেন।


আজকের দিনটি মার্কিনীরা অধীর আগ্রহ নিয়ে দেখবে বিদায়বেলায় হোয়াইট হাউজ ত্যাগের পূর্বে ডোনাল্ড ট্রাম্প কি করেন। পরাজয় মানতে ট্রাম্প সমর্থকদের অস্বীকার এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের অনুমোদন ঠেকাতে দেশজুড়ে সাম্প্রতিক নজিরবিহীন সহিংতার পর বাইডেনের সামনে এক কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতা অপেক্ষা করছে বলেই মনে করা হচ্ছে।


জো বাইডেন নিজেই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম কাজ হচ্ছে করোনা মহামারির কবল থেকে আমেরিকাকে মুক্ত করা। তার দ্বিতীয় কাজ, তার মতে, ট্রাম্পের আমল ছিল আমেরিকার অন্ধকার যুগ। এই অন্ধকার যুগ থেকে আমেরিকাকে আলোয় ফেরা।


আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় বাইডেন যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রক্ষা করার প্রথম প্রমাণ শুরুর দিনেই জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। সে হিসেবে বাইডেন মুসলিমপ্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি প্রথম দিনই বাতিল করবেন।


ক্ষমতা গ্রহনের দিনই ১ কোটি দশ লাখ অভিবাসীকে দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যারা অবৈধ ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এ প্রক্রিয়ায় দ্রুততার সাথে নাগরিকত্ব পাবেন তারা।


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে চার বছর ধরে নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি ও গণহারে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার শিকার হওয়া লাতিন ও অন্যান্য অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য বাইডেন যে প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হবে এ নতুন সিদ্ধান্তটিতে।


জলবায়ু-সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে এনেছিলেন ট্রাম্প। বাইডেন তার প্রথম কর্মদিবসেই এই চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন। বাইডেন প্রশাসনের প্রথম কর্মদিবসের নির্বাহী আদেশের মধ্যে আরও রয়েছে করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন শিক্ষা ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখার নির্দেশ।


অর্থনৈতিক কারণে বাড়ি ভাড়া দিতে না পারার কারণে ভাড়াটেদের উচ্ছেদ স্থগিত রাখার আদেশ। প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতি বাইডেনের নির্দেশনামূলক কিছু আদেশ জারি করা হবে বলেও জানিয়েছেন রন ক্লেইন।


রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র দুই নীতির ক্ষেত্রেই বাইডেন হয়তো ওবামা নীতিতে ফিরে যাবেন। তবে চীনের ব্যাপারে তিনি হয়তো ট্রাম্পের নীতিতেই অবিচল থাকবেন। কারণ চীনের সঙ্গে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক। এই দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে না পারলে ধনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।


বাইডেন বক্তৃতায় স্পষ্ট করেছেন, তার প্রথম আইনপ্রণয়নের উদ্যোগের মাধ্যমে আমেরিকার অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত নাগরিকদের সহযোগিতায় আইন পাস করা হবে। সিনেটে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বাইডেনের সুসম্পর্ক এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।


বিশেজ্ঞরা বলছেন, জো বাইডেন সফল হাতে সকল সমস্যা মোকাবেলা করতে পারবেন। তিনি নিজে এলিট ক্লাসের লোক। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হলেও একজন ভালো প্রশাসক ও সংগঠক। ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে সিনেটর নির্বাচিত হওয়ায় মার্কিন রাজনীতি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতাও প্রচুর।


বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেয়েছেন কমলা হ্যারিসকে। তিনি মিশ্র বর্ণের মহিলা। মার্কিন রাজনীতির সাদা-কালো দুটি দিক সম্পর্কে ভালো জানেন। তাদের যুক্ত প্রচেষ্টা হবে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী আমেরিকার মানবিক ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সহজসাধ্য কাজ তা মনে হয় না।


এদিকে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন জো বাইডেন। সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ হামলা এড়াতে ওয়াশিংটনে মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজার সদস্যের নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। আর্মি সেক্রেটারি রায়ান ম্যাকার্থি বলেছেন, তিনি এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ গার্ড সদস্যদের মধ্য থেকে কোনও হুমকির প্রমাণ দেখেননি।


বুধবার একটি ‘নতুন প্রশাসন’ আসবে ট্রাম্প তা মেনে নেওয়া সত্বেও নিজের পরাজয় মেনে নিতে বা বাইডেনকে অভিনন্দন জানাতে অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ১৬০ বছরের মার্কিন ঐতিহ্য উপেক্ষা করে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।