বাংলাদেশের প্রথম চা জাদুঘরের উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির জেলা প্রতিনিধি , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: রবিবার ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের প্রথম চা জাদুঘরের উদ্বোধন

শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত 'টি রিসোর্ট অ্যান্ড টি মিউজিয়াম' বাংলাদেশের প্রথম চা জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। এটি চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে, ভানুগাছ সড়কের পাশে অবস্থিত। মিউজিয়ামটি চা শিল্পের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং ব্রিটিশ আমলের চা বাগানের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন করে। চা বাগান কর্মীদের ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, যুদ্ধবিমানের অংশসহ পুরোনো নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত রয়েছে।  


এটি ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। মিউজিয়ামের চারটি কক্ষে রয়েছে দেড়শত বছরের চা শিল্পের নানা স্মারক। প্রথম কক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত কাঠের চেয়ার ও টেবিল সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৫৭-৫৮ সালে শেখ মুজিব চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এই আসবাবপত্র ব্যবহার করেছিলেন।  


মিউজিয়ামের আরও আকর্ষণীয় জিনিসগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাউয়াছড়া বনে বিধ্বস্ত একটি যুদ্ধবিমানের অংশ, ব্রিটিশ আমলের রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রা, চা প্রসেসিং যন্ত্রপাতি এবং চা গাছের ছাঁটাইয়ের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্র। এছাড়াও ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের পুরোনো টেলিফোন, ফ্রিজ, লিফট পাম্প এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রদর্শিত হচ্ছে।  


এটি শুধু একটি জাদুঘর নয়, বরং চা শিল্পের ইতিহাসের একটি জীবন্ত সাক্ষী। এখানে চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন পুরনো যন্ত্রপাতি যেমন প্রনিং দা, চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত মাদুলী, রুপার গহনা, খুন্তি, কোদাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংরক্ষিত আছে। মিউজিয়ামটি চা বাগান শ্রমিকদের জীবনযাত্রা এবং তাদের ব্যবহার্য জিনিসগুলির ব্যাপারে দারুণ তথ্য প্রদান করে।  


মিউজিয়ামের চার কক্ষের মধ্যে বিশেষ কক্ষগুলোতে পুরোনো চা গাছের গুড়ি, প্রাচীন বৈদ্যুতিক পাখা, ঘড়ি, কম্পাস, সেরামিক জারসহ ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন রাখা হয়েছে। এমনকি একটি কক্ষে ব্রিটিশ আমলে চা বোর্ডের হিসাবরক্ষকের ব্যবহৃত টাকা রাখার বাক্সও রয়েছে।  


শ্রীমঙ্গলের টি মিউজিয়ামটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। টিকিট মূল্য ২০ টাকা। শীতকালে ও ছুটির দিনে মিউজিয়ামে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়, এবং অন্যান্য দিনও কিছু দর্শক আসেন। তবে ছুটির দিনে প্রায় অর্ধশত দর্শক উপস্থিত হন।  


বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ কে এম রফিকুল হক জানান, চা জাদুঘরটি প্রজন্মের জন্য চা শিল্পের ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এই মিউজিয়ামটি আরও উন্নত এবং ব্যাপক পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।  


শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত এই চা জাদুঘরটি একদিকে চা শিল্পের ইতিহাস সংরক্ষণের কাজ করছে, অন্যদিকে চা ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের কাছে শ্রীমঙ্গলের পরিচিতি আরও বাড়াচ্ছে।