বরিশালে রোটা ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে নারী ও শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৯শে মার্চ ২০২২ ০৫:৩৫ অপরাহ্ন
বরিশালে রোটা ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে নারী ও শিশু

বরিশালে গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই গড়ে ৫০ জন ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। বর্তমানে দুই হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে নারী ও শিশু। তবে বরিশালে ডায়রিয়ার রোগীদের জন্য জেনারেল হাসপাতালের নির্ধারিত ডায়রিয়া ওয়ার্ড পুরানো হয়ে যাওয়ায় ভবনটি ভেঙ্গে নতুন করে ভবনের নির্মাণ কাজ চলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য বর্তমানে সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। তাই বর্তমানে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডেই ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা চলছে। বারান্দায় বিছানা পেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। 


বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের সূত্রে জানাগেছে, গত ৭ দিনে ১শ’র মত রোগী রোটা ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মত রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে গত ৭ দিনে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭৫ জন। অপরদিকে শেবাচিম হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ৪৩ জন শিশু ভর্তি আছে। 


এদিকে বরিশালে বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতালগুলোতেও ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করছেন, পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে। 


প্রসঙ্গত, গত বছর বরিশালে নদীর পানি লবণাক্ত হওয়ায় ভয়াবহভাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই সময় এ অঞ্চলের পানিতে কলেরার জীবাণু পেয়েছিল। 


বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল বলেন, চৈত্র-বৈশাখে পানিবাহিত এ রোগটির প্রকোপ দেখা দেয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নদী-খালের পানি ব্যবহারকারীরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, নগরীর পথচারীরা গরমে পিপাসু হয়ে পথেঘাটে শরবতসহ নানা মুখরোচক খাবার খাচ্ছেন। এতেও ডায়রিয়া ছড়াতে পারে। 


ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নুরজাহান বলেন, হঠাৎ করে পেটে ব্যথা ও পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ায় হাসপাতালে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। কি কারনে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় খাবারে কোন সমস্যা ছিলো তাই হয়েছে। 


বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মলয় কৃষ্ণ বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারনে রোটা ভাইরাল ডায়েরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। এটা সামাল দিতে পর্যান্ত আইভি স্যালাইন রয়েছে আমাদের। রোগীদের স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের এ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার প্রয়োজন হয় না। স্যালাইনেই ভালো হয়ে যায়। তবে এ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার দরকার হয় তাদেরকে আমরা দিয়ে থাকি। 


বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব জেলায় কিছুটা বাড়ছে। খালের, পুকুরের পানি পান করা যাবে না-এমন নির্দেশনা তারা স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে জনগণের মাধ্যমে পৌঁছাচ্ছেন। এমনকি থালা বাসন ধোঁয়ার ক্ষেত্রেও নদী, খাল, বিল, পুকুরের পানি ব্যবহার নিষেধ করছেন। তিনি আরো বলেন, গরম কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কারনেও ডায়রিয়ায় আক্রান্তর সংখ্যা বেড়েছে।