দেবীদ্বারে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং, ব্যাহত শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, উপজেলা প্রতিনিধি - দেবীদ্বার, কুমিল্লা
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৪ঠা এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৭ অপরাহ্ন
দেবীদ্বারে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং, ব্যাহত শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা

চৈত্রের তীব্র তাপদাহ ও পবিত্র রমজানুল মোবারকের মাঝে জেগে বসেছে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং। কুমিল্লার দেবীদ্বারে পবিত্র রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবির নামাজের সময় বিদ্যুৎ না পেয়ে এলাকার জনগণের মাঝে এক চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে।


মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের, ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা ও কারখানায় উৎপাদন। এছাড়াও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে উপজেলার মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলোর বেচাকেনায় পড়েছে ভাটা।


বৃহস্পতিবার (৪এপ্রিল) সকাল থেকে উপজেলা সদর, পৌর এলাকা ও বিভিন্ন গ্রাম এলাকা ঘুরে এবং গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র গরমে রোজা রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে অতিষ্ঠ জীবন পার করতে হচ্ছে। একাদিক গ্রাহক ক্ষোভের সাথে বলেন, বিদ্যুৎ এসে এক ঘন্টা থাকে, আর গেলে কয়েক ঘন্টা পরে আসে এভাবেই চলে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার খেলা। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সব মিলিয়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায়।


দেবীদ্বার আলহাজ্ব জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজের ব্যাবসা শাখার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও পৌর এলাকার বাসিন্দা সাদিয়া আফরোজ সাথী জানান, আগামী ৩০ জুন পরীক্ষা শুরু, একদিকে প্রচন্ড গরম অপর দিকে বিদ্যুৎ এর লোডশেডিংয়ে লেখা পড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।


দুপুরে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা গেছে ভর্তিকৃত রোগীদের হাত পাখায় বাতাস করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে রোগীর পাশে থাকা স্বজনরা। সবকটি ওয়ার্ডের চিত্র প্রায় একই রকম।


এসময় কথা হয় ভিংলাবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ মলেকা বেগমের সাথে তিনি জানান, তার ১মাস ১৫দিন বয়সের শিশুপুত্র রাকিব নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাই সন্তানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা মিললেও বিদ্যুৎ একবার আসলে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলে দুই থেকে তিন ঘন্টার পর আসে এতে শিশু রোগীকে সঠিক সময়ে নেবুলাইজার দেয়া যাচ্ছে না।


সন্তানের চিকিৎসার জন্য উপজেলা খাইয়ার গ্রাম থেকে হাসপাতালে আসা মিম আক্তার জানান, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৪ মাস বয়সের ছেলে মিনহাজ কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারনে তাকে নেবুলাইজার দিতে সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে যেন অতিরিক্ত গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে সে।


বিকেলে দেবীদ্বার নিউ মার্কেটের বিপণী বিতান গুলোতে দোকান মালিকদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, এই সময়ে ব্যবসা করার জন্য সারা বছর বসে অপেক্ষা করি। কয়েকদিন পর ঈদুল ফিতর, তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা মার্কেটে তেমন আসছে না। যদি স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকতো ক্রেতাদের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যেত।


চিকিৎসা সেবা নিয়ে দেবীদ্বার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ময়নাল হোসেন (ভিপি) জানান, দেবীদ্বার উপজেলায় ৩৮ টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারনে হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের এক্সরে, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশন করাতে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া ভর্তিকৃত রোগীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। জেনারেটর চালিয়েও সুবিধা করা যাচ্ছেনা, তাছাড়া কম পাওয়ার জেনারেটর ব্যাবহার করায় তৈরি হচ্ছে শব্দ দূষণ।


এদিকে অতিমাত্রায় বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের ফলে ক্ষোভে ফুঁসছে দেবীদ্বারের জনগন।দেবীদ্বার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জোনাল অফিসের ডিজিএম কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলছে ভুক্তভোগীরা।


দেবীদ্বার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -১ জোনাল অফিসের ডিজিএম রেজাউল করিম খান কে উদেশ্য করে দেবীদ্বার পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম শামীম তার নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে এক পোস্টে বলেন- " দেবীদ্বার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জোনাল অফিসের সন্মানিত ডিজিএম রেজাউল করিম খান মোহদয়ের এর কাছে আকুল আবেদন, দয়া করে পৌর এলাকায় সেহরী, ইফতার ও তারাবী নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করুন। মেয়র সাইফুল ইসলামের এমন পোস্টের কমেন্টে মাহিনুল ইসলাম রাসেল বলেন "দেবীদ্বারে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং এর যাত্রা শুরু এ যেন দেখার কেউ নেই। সেহরী আর ইফতারের সময় নতুন ভোগান্তির নাম বিদ্যুৎ লোডশেডিং।


দেবীদ্বার উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার হায়দার তার ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করে বলেন, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম সাহেব আপনার সমস্যা কি? বিদ্যুতের সব সমস্যা কি দেবীদ্বারেই ? এমন নানান সমালোচনা ঝড় বইছে পুরো ফেসবুক জুড়ে।


এবিষয়ে দেবীদ্বার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -১ জোনাল অফিসের ডিজিএম রেজাউল করিম খাঁন বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় সারাদেশেই বিদ্যুতের সংকট চলছে। দেবীদ্বারে ৮৫ হাজার গ্রাহকের চাহিদা হলো ২৩ মেগাওয়াট, সেখানে আমরা পাচ্ছি ৬ মেগাওয়াট। যা দিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা পূরন করা সম্ভব নয়। আমরা যা পাচ্ছি তাই ডিস্ট্রিবিউশন করছি।