৪৩তম বিসিএস: পুনরায় ভ্যারিফিকেশনের নামে বৈষম্যের অভিযোগ- সারজিস আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শনিবার ৪ঠা জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
৪৩তম বিসিএস: পুনরায় ভ্যারিফিকেশনের নামে বৈষম্যের অভিযোগ- সারজিস আলম

৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় পুনরায় ভ্যারিফিকেশনের মাধ্যমে ১৬৮ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ভ্যারিফিকেশন মিলিয়ে বাদ পড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৭ জনে। বাদ পড়ার কারণ হিসেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার নেতিবাচক রিপোর্ট, বিশেষত রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।  


সরকারি চাকরিতে রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রবণতা দীর্ঘদিনের। বর্তমান সময়েও একই ধরনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সফল হয়েছে, তাদের কেন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বাদ দেওয়া হবে?  


কোনো ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য তার চাকরিতে প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করা কতটা ন্যায্য? একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার কি তার পরিবারের অন্য সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ক্ষুণ্ন হতে পারে?  


সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এবার গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারিদের কাছে গিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করেছেন। এর মানে, এক মেধাবী তরুণ, যিনি দীর্ঘ তিন বছর পড়াশোনা করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তার চাকরি নির্ভর করছে স্থানীয় নেতাদের মতামতের উপর।  


এ ধরনের প্রক্রিয়া চাকরি প্রার্থীদের জন্য চরম হতাশার কারণ। কেন এই ভ্যারিফিকেশন প্রক্রিয়া প্রিলিমিনারির আগে সম্পন্ন করা হয়নি? এতে চাকরিপ্রার্থীরা সময় ও শ্রম নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচতো।  


একজন মেধাবী চাকরিপ্রার্থীর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আমার পরিচিত এক প্রার্থী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন এবং এমএসে জিপিএ ৪.০০ পেয়েছিলেন, তাকে রি-ভ্যারিফিকেশনের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, তবু রাজনৈতিক পরিচয়ের অজুহাতে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।  


পুনর্বিবেচনার সুযোগ দেওয়া হলেও এমন প্রক্রিয়া চাকরি প্রার্থীদের আস্থা নষ্ট করছে। অনেকেই তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমনকি দেশত্যাগের কথাও ভাবছেন অনেকে।  


সরকারি চাকরি মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কোনো মতাদর্শের কারণে কাউকে বঞ্চিত করা সংবিধান বিরোধী এবং এর ফলে প্রজন্মের মধ্যে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করে স্বচ্ছ ও ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন।