বরিশালে অধিক মজুরী দিয়েও মিলছেনা ধান কাটা শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৪ঠা মে ২০২১ ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন
বরিশালে অধিক মজুরী দিয়েও মিলছেনা ধান কাটা শ্রমিক

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও মুখে হাসি নেই কৃষকদের। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না ধানকাটা শ্রমিক। কালবৈশাখী বন্যার আশঙ্কায় ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। 


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকার মাঠে মাঠে সোনালী ধান। তবে ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। প্রতি বছর এ সময় উত্তরাঞ্চল থেকে হাওরে ধান কাটতে আসেন হাজার হাজার শ্রমিক। তবে এবারের দৃশ্যটা ঠিক উল্টো। করোনায় থমকে আছে সারা দেশ। তাই চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। 



এদিকে আগাম জাতের ৩৫ ভাগ ধান কাটা শুরু হলেও ব্রি-২৯ জাতের ৬৫ ভাগ ধানই কাটা শুরু হতে এখনও বাকি ১০ দিন। রয়েছে আগাম বন্যার আশঙ্কা। এ অবস্থায় সময় মতো ধান কাটা নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক। গত বছর ধানের কাঙ্ক্ষিত দাম পায়নি এখানকার কৃষক। 


তাই এবার উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় সংসার খরচ ও ধার-দেনা মিটাতে কাটার পরই জমির পাশেই কম দামে ভেজা ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেকে। সরকারের প্রতি দ্রুত সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানিয়েছেন তারা। 



উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার সতর্ক বার্তা আছে আমাদের কাছে। এই বিষয়ে আগেই আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। ৮০ শতাংশ পাকলেই কেটে ফেলতে বলা হচ্ছে। গত বছর বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবার বীজতলা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পুরো মৌসুমই সেচের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। তারপরও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। 


এবার বাবুগঞ্জ উপজেলায় ধানের আবাদ হয়েছে ২ হাজার হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন।  এছাড়াও তিনি বলেন, এ বছর ৪হাজার ৫৩০ জন কৃষককে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। 



প্রণোদনার আওতায় বোরো মৌসুমে কৃষকদের ১ কেজি হাইব্রিড বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া এলাকার কৃষক মোঃ গফুর মোল¬া বলেন, ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার উচ্চ ফলনশীল ( হাইব্রিড) জাতের ধান লাগিয়েছি। 



এর আগে ২৮ ধান লাগাতাম। দেড় বিঘা জমিতে ধান লাগাতে ২০-৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে ধানের মণ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা যা কাঙ্খিত দাম নয় বলে তার অভিযোগ। একই মাঠে কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, আশপাশের অনেক মাঠের ধান বৈশাখের শেষ তারিখ পর্যন্ত কাটা হবে। ভালো ফলন হয়েছে তবে প্রকৃত দাম পাবো কিনা সেটা দেখার বিষয়। 



এবছর বৃষ্টির অভাবে অন্যান্য বছরের চেয়ে খরচ অনেক বেশি হয়েছে। তাছাড়া লেবার সংকট। শ্রমিক পাওয়া গেলেও জন প্রতি সাড়ে ৫’শ টাকা করে দিতে হয়। বাবুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মিন্টু বেপারী জানান, শুকনো ধান ৮০০ টাকা ও স্যাতস্যাতে বা ভিজা ধান ৭০০ টাকা করে ক্রয় করছেন। 



বাবুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের ওসি এলএসডি ফরিদা খাতুন জানান, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক গতকাল থেকে ধান ক্রয় করা শুরু করেছেন। এবার ১ মন ধানের মুল্য ১ হাজার ৮০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় শুরু করেছেন। এবার ২৫০ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করবেন বলে তিনি জানান। 



বাবুগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছাদেকুর রহমান সুরুজ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর খুব ভালো ফলন হয়েছে । তাছাড়া মাঠে গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আর ৮/১০ দিন বড় ধরনের কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক অন্যবারের তুলনায় বাম্পার ফলন পাবেন। 



বাবুগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ নাসির উদ্দীন বলেন, মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত রবি শস্যের মৌসুম। আর এই সময় যে ধান রোপণ করা হয় সেটি বোরো ধান। তিনি বলেন, এবার ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কৃষকরা ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।