কুমিল্লার দেবীদ্বারে ধর্ষণ মামলার ২ অভিযুক্ত আসামী জেল থেকে জামিনে বেড়িয়ে এসে মামলার বাদী ও ভিক্টিমকে মামলা তুলে নিতে প্রাণ নাশের হুমকী দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ন্যায় বিচারের আশায় ঘটনার পর থেকে হতদরিদ্র মামলার বাদী ও পিতৃহীন ভিক্টিম বিগত ৭ বছর ধরে আদালতে ঘুরে বেড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মামলা পরিচালনায় দির্ঘসূত্রিতায় পারিবারিক অসচ্ছল বাদীকে মামলা পরিচালনায় হিমসিম খেতে হচ্ছে।
মামলার বাদী ও ভিক্টিম জানান, মামলার ২ আসামী হাসান ও আনোয়ার ৪ বছর কারাবাস থাকার পর ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আদালত থেকে জামিনে আসেন। জামিনে এসে তাদেরকে মামলা তুলে নিতে প্রাণ নাশের হুমকী দিয়েই ক্ষান্ত ছিলনা, একাধিকবার অপহরনেরও চেষ্টা চালায়। রায়ের প্রতিক্ষায় বাদী ও ভিক্টিম পালিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন ।
তারা আরো জানান, প্রতিবন্ধী একমাত্র ছেলের যখন ১০ বছর এবং আমার একমাত্র মেয়ে (ভিক্টিম)’র যখন ৭ বছর তখন আমার স্বামী মারা যান। আমার স্বামী সম্পদ বলতে ২ শতাংশ ভিটি জমি রেখে গেছেন। নিজের ভিক্ষাবৃত্তি এবং একমাত্র প্রতিবন্ধী পুত্রের ভিক্ষার আয়ে সংসারের ভরনপোষনই চালানো কষ্টকর উপরন্ত মামলা পরিচালনা খুবই কষ্ট হচ্ছে।
উল্লেখ্য ২০১৫ সালের ১২ মে দেবীদ্বার পৌর এলাকার বড়আলমপুর গ্রামের পিতৃহারা এক কিশোরী (১৫)কে গোমতী নদীর ভেরী বাঁধের উপর আশ্রিত একটি ঘরে ঢুকে ওইদিন রাত ৯টায় অভিযুক্ত এরশাদ মিয়া পিস্তল’র ভয় দেখিয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে একই গ্রামের শাজাহানের ছেলে হাসান ও রেনু মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন’র হাতে তুলে দিয়ে সে পালিয়ে যায়। হাসান ও আনোয়ার ওই কিশোরীকে নিয়ে গোমতী ভেরীবাঁধের একটি ঝুপড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে। অভিযুক্তরা পালাক্রমে ধর্ষণের পর রাত ১ টায় কিশোরীকে তার বাড়ির সামনে অচেতন অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়।
বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে স্থানীয় মাতব্বরদের উদ্যোগে ঘটনার ৪দিন পর অর্থাৎ ১৬মে বড়আলমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সালিস ডাকা হয়। ওই সালিসে ধর্ষণের ঘটনাটি প্রমানীত হয় এবং ওই দিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত সালিসে কোন সুরাহা না হওয়ায় হাসান ও আনোয়ারকে গনপিটুনি দিয়ে থানা পুলিশের নিকট সোপার্দ করা হয়। পরে আটক অভিযুক্ত ২জনের স্বীকারোক্তিতে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) জাকির সিকদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিয়ে গোমতী ভেরী বাঁধের উপর হাসানের দোচালা টিনের ঘরের কাঁচা মেঝেতে লোকিয়ে রাখা পিস্তলটি উদ্ধার করেন। পরে জানা গেল সেই পিস্তলটি ছিল খেলনা পিস্তল।
ওই ঘটনায় ১৬ মে ভিক্টিমের মা’ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০ (সংশোধনী/০৩ এর ৭/৯(৩)/৩০ ধারায় ৪ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০৫, তারিখ- ১৬/০৫/২০১৫ইং।
মামলার আসামীরা হলেন, বড়আলমপুর (বিনাইপাড়) গ্রামের মাছ ব্যবসায়ি শাজাহান মিয়ার ছেলে মোঃ হাসান(২৩), একই গ্রামের মাছ ব্যবসায়ি রেনু মিয়ার ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন(২৩), আব্দুল্লাহপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন গেসু মিয়ার ছেলে এরশাদ(২৮) ও একই গ্রামের মালু মিয়ার ছেলে আরিফ (২০)।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মালু মিয়ার ছেলে আরিফকে মামলার চার্জশীট থেকে বাদ দিয়ে ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৬০/১ চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ৩ অভিযুক্তের মধ্যে আব্দুল্লাহপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন গেসু মিয়ার ছেলে এরশাদ মারা যান।
ভিক্টিমের আইনজীবী এডভোকেট মোঃ শাহআলম জানান, ৮৫৯/১৫ নং মামলার বাদী ও ভিক্টিমকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকী প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে শুনেছি। বাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে, আসামী পক্ষের যুক্তিতর্কের তারিখ বার বার পেছানো হলেও আগামী ২৯ জুন আসামী পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানীর তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।