ভারত প্রথম ইনিংস ঘোষণা করার পর শংকা জেগেছিল, ঐতিহাসিক দিবা-রাত্রির টেস্ট দুই দিনেই শেষ হয়ে যায় কিনা। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা দেখে শংকাটা আরও দৃঢ় হয়। তবে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর লড়াকু ব্যাটিংয়ে কলকাতা টেস্ট গড়াল তৃতীয় দিনে। হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় মাঠ ছেড়েছেন ভালো ব্যাটিং করতে থাকা মাহমুদউল্লাহ। দিনশেষে বাংলাদেশর সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪৭ রান। ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা এড়াতে বাংলাদেশকে আরও ৮৯ রান করতে হবে।
ম্যাচের দ্বিতীয় দিন আজ নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেও যথারীতি আউট হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। দলের স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না হতেই 'ডাক' মারেন সাদমান। ইশান্ত শর্মার বলে তাকে এলবিডাব্লিউ দেন আম্পায়ার। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে অকারণে একটি রিভিউ নষ্ট করে বাংলাদেশ। দলীয় ২ রানে প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি করে 'ডাক' মারেন অধিনায়ক মুমিনুল। গোলাপি বলের প্রথম টেস্টে তার নামের পাশে কোনো রান যোগ হলো না। আউট হওয়ার প্রতিযোগিতায় নাম লেখান মিঠুন আর ইমরুল। ৬ রান করা মিঠুন উমেশ যাদবের শিকার হন। আর ৫ রান করা ওপেনার ইমরুলকে বিরাট কোহলির তালুবন্দি করেন ইশান্ত শর্মা।
১৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর লড়াই করার চেষ্টা করেন 'ভায়রা-ভাই জুটি' হিসেবে খ্যাত মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ। দারুণ জমে গিয়েছিল তাদের জুটি। কিন্তু ইনিংসের ১৯তম ওভারে উমেশ যাদবের বলে পায়ের পেশিতে টান লাগায় মাঠ ছাড়েন ৪১ বলে ৩৯* করা মাহমুদউল্লাহ। ৬৯ রানে অবসান হয় জুটির। ২১.২ ওভারে একশ ছাড়ায় বাংলাদেশের স্কোর। মুশফিকের সঙ্গী হন 'কনকাশন সাব' মেহেদী মিরাজ। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে ৫৪ বলে ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। মিরাজ তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি। একাদশ থেকে বাদ পড়া এই তরুণকে ১৫ রানে নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণ করেন ইশান্ত শর্মা।
ব্যক্তিগত ৫৯ রানে সফল রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মুশফিক। এর আগে ব্যক্তিগত ১৭ রানেও একইভাবে এলবিডাব্লিউর সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে পাল্টে দেন 'মি. ডিপেন্ডেবল'। শেষ পর্যন্ত তিনি ৬৫ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শেষ করেন। তাইজুল ইসলাম অপরজিত আছেন ১০ রানে। বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪৭ রান। ইনিংস পরাজয় এড়াতে আরও ৮৯ রান করতে হবে টাইগারদের।
এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ১০৬ রানের জবাবে আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ৯ উইকেটে ৩৪৭ রান তুলে নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। শনিবার গতকালের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যন আজিঙ্কা রাহানে এবং বিরাট কোহলি চতুর্থ উইকেটে বড় জুটি গড়ার পথেই ছিলেন। ৬৯ বলে ৫১ রান করা আজিঙ্কা রাহানেকে ফিরিয়ে দিনের প্রথম সাফল্য এনে দেন তাইজুল ইসলাম। এরই সঙ্গে ভাঙে ৯৯ রানের দারুণ এক জুটি। ৮৯ রানে অপরাজিত কোহলির সঙ্গী হন রবীন্দ্র জাদেজা। এরপর ১৫৯ বলে ১২ বাউন্ডারিতে ঐতিহাসিক ম্যাচে ভারতের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান কোহলি। এটা 'কিং কোহলি'র টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরি।
গোলাপি বলের টেস্টে ভারতের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরির পরও রানের চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ভয়ংকর এই ব্যাটসম্যানকে থামানোটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। সেই কাজটি করে দেখালেন এবাদত হোসেন আর তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশি পেসারের তৃতীয় শিকার হয়ে ১৯৪ বলে ১৩৬ রান করে ফিরেছেন ভারত অধিনায়ক। ডিপ স্কয়ার লেগে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়েছেন নাইম হাসানের বদলি হিসেবে নামা তাইজুল। এর আগে রবীন্দ্র জাদেজাকে (১২) বোল্ড করে প্রথম শিকার ধরেছেন আরেক পেসার আবু জায়েদ রাহী। এরপর দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে ভারত।
আল-আমিনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন স্পিন অল-রাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৯)। উমেশ যাদবকে (০) সাদমান ইসলামের তালুবন্দি করে দ্বিতীয় শিকার ধরেন আরেক পেসার আবু জায়েদ। ইশান্ত শর্মাকে (০) এলবিডাব্লিউ করে দেন আল-আমিন। ৩৩১ রানে নবম উইকেট হারায় ভারত। শেষ উইকেটে ঋদ্ধিমান সাহার সৌজন্যে কিছু রান ওঠে। শেষ পর্যন্ত অল-আউট থেকে বাঁচতে ৯ উইকেট ৩৪৭ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। তাদের লিড হয় ২৪১ রানের। ঋদ্ধিমান ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন। ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আল-আমিন এবং এবাদত। ২টি নিয়েছেন আবু জায়েদ।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।