মাশরাফি বিন মর্তুজার আজকের ‘মাশরাফি’ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যার তিনি হচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার অ্যান্ডি রবার্টস। ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯র বিশ্বকাপ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বোলিং আক্রমণ ভাগের প্রধান অস্ত্রো রবার্টস ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের ফাস্ট বোলারদের নিয়ে কাজ করেছেন। তার অধীনেই বিকেএসপি-তে এক ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন মাশরাফি। তার হাতেই তৈরি টাইগার ক্যাপ্টেন। মাশরাফিকে তিনি কৌশিক নামে ডাকতেন। এটি মাশরাফির ডাক নাম। নড়াইল এক্সপ্রেসের বোলিং গুরুর সঙ্গে টনটনের ‘কর্নার হাউজ হোটেলে’ দেখা হয়ে যায়। সেখানে প্রিয় ছাত্র কৌশককে (মাশরাফি) নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘কত দিন ওর সঙ্গে মজা করেছি! আমি ওকে কৌশিক নামেই চিনি।’
শুরুর দিকে বিকেএসপির ট্রেনিং ক্যাম্পে মন বসাতে পারছিলেন না মাশরাফি। তাই সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি চলে যাবেন। নড়াইলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাউকে না জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়ে মিরপুরে এক চাচার বাসায় ওঠেন। রবার্টস পরদিন সকালে প্রিয় ছাত্রকে ক্যাম্পে দেখতে না পেয়ে মাশরাফির চাচার ঠিকানায় সোজা মিরপুরে চলে যান। আবেগ তাড়িত কণ্ঠে মাশরাফিকে বলেন, ‘তুমি ক্যাম্পে যোগ দাও’! গুরুর সেই কথা অমান্য করতে পারেননি কৌশিক! আর সে কারণেই কিনা বাংলাদেশ পেয়েছে আজকের এই মাশরাফিকে। রবার্ট বলেন, ‘ ওর বয়স যখন ১৬-১৭ বছর সে খুবই আগ্রহী ছিল বোলিং করার ক্ষেত্রে। আমি যখন বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসি তখন ওকে একটাই উপদেশ দিয়েছিলাম যা করবে মন দিয়ে কর। সেই ছিল একমাত্র বোলার যে কখনো কোনো কিছুতে না বলত না। এ কারণেই আমি ওকে ভীষণ পছন্দ করতাম। এখনো সে সেই স্বভাব বদলায়নি।’
সেই ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। কিন্তু মাশরাফিকে তার মনে আছে! প্রিয় ছাত্র বলে কথা! রবার্টস বলেন, ‘ আমার ছাত্রের মধ্যে সেই ছিল সেরা। সে-ই একমাত্র পেসার যে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিল। আত্মপ্রত্যয়ী ছিল। কঠোর পরিশ্রমের কারণে সফল হয়েছে।’ এই মাশরাফিকে যতই দেখছেন ততই অবাক হচ্ছে উইন্ডিজ কিংবদন্তি, ‘আমি সত্যিই এখনো ওকে দেখে অবাক হয়ে যাই, ও এখনো কত পরিশ্রম করতে পারে! হাঁটুর অপারেশন নিয়েও সে উইকেট শিকারের জন্য কতো কষ্ট করে। মানুষ তাকে অবশ্যই মনে রাখবে এবং অনেক সম্মান করবে। তাকে কতো যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে। তার শরীরের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে।’
কয়েক সপ্তাহ আগে কথাও হয়েছে মাশরাফির সঙ্গে। ফোনেই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, ‘বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল এবং ওর সঙ্গে আমার দেখা করার কথাও ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে লন্ডনে দেখা করতে পারিনি।’ খুব ভালো বোলিং করতে না পারার কারণে সাম্প্রতিক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মাশরাফিকে। রবার্টস মনে করেন, সে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য যা করেছে সেজন্য তার সমালোচনা করতে পারেন না! ‘না, এটা ঠিক না! হয়তো সমর্থকরা ওর কাছে যা চাচ্ছে তা যখন পাচ্ছে না তখনই সমালোচনা করছে। ওর ক্যারিয়ার অনেক দীর্ঘ। সে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট মস্তিষ্কও।’ মাশরাফির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শুভ কামনা। ওর জন্য আমার সব সময় শুভ কামনা থাকবে।’ বিশ্বকাপের পরই অবসর নেবেন টাইগার ক্যাপ্টেন। এ প্রসঙ্গে তার গুরু বলেন, ‘এসব না ভেবে বিশ্বকাপে খেলা চালিয়ে যাওয়াই তার পরিকল্পনা হওয়া উচিত। আমি মনে করি বিশ্বকাপের পর সে অবসরের চিন্তা ভাবনা করতে পারে।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।