১৯৮৯ সালে বিস্ময় বালক হিসেবে পাকিস্তানেই উদয় ঘটেছিল তাঁর। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের নাম? ইমরান খান। সেই সচিন তেন্ডুলকরই জানিয়ে দিলেন, পাকিস্তানকে ক্রিকেট মাঠে বয়কট করার পক্ষপাতী নন তিনি। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা উচিত কি উচিত না, সেই প্রশ্নকে বাউন্ডারির বাইরেই পাঠিয়ে দিলেন সচিন। ক্রিকেট জীবনে যিনি সব চেয়ে বেশি পাক বোলিংকে চূর্ণ করেছেন, সেই ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ বলে দিলেন, ম্যাচ বয়কট করে পাকিস্তানকে দুই পয়েন্ট উপহার দিতে তিনি ঘৃণা বোধই করতেন।
মুম্বইয়েরই আর এক লিটল মাস্টারের বক্তব্যের সুরই এ দিন পাওয়া গিয়েছে সচিনের কথায়। তিনি বলে দেন, ‘‘বিশ্বকাপে সব সময়েই পাকিস্তানকে টেক্কা দিয়েছে ভারত। ফের ওদের হারানোর সময় হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ঘৃণা বোধ করতাম, না খেলে দুই পয়েন্ট উপহার দিতে। তাতে তো ওদেরই সুবিধে করে দেওয়া হবে।’’ পুলওয়ামার জঙ্গি হানার ঘটনাকে কেন্দ্র করে খেলাধুলোর মহলেও পাকিস্তানকে বয়কট করার ডাক দিয়েছে ভারত। তাতে গলা মিলিয়েছে ক্রিকেট মহলের একাংশ। প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যে কেউ কেউ ডাক দিয়েছেন বিশ্বকাপে পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট করার। এই দলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, হরভজন সিংহের মতো প্রাক্তনরা রয়েছেন। সৌরভ বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের ক্রীড়া সম্পর্কই ছিন্ন করুক ভারত। হরভজন হুঙ্কার ছেড়েছেন, বিশ্বকাপ ম্যাচ বয়কট করো। আর আজহার বলেছেন, না খেললে কোনও জায়গাতেই খেলা উচিত নয় পাকিস্তানের সঙ্গে।
এর মধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সচিনের মন্তব্য। তিনি যে সৌরভ বা হরভজনের মতো চরম সিদ্ধান্তের পক্ষপাতী নন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। সচিন যদিও বলেছেন, ‘‘আমার কাছে ভারত সবার আগে আসবে। যদি দেশবাসী এমন সিদ্ধান্ত নেন, আমি তার সঙ্গে আছি।’’ তবে দেশবাসীর ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দিলেও বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে ম্যাচ ও পয়েন্ট উপহার দেওয়া যে মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন সচিন। আর এমন একটা দিনে তিনি মুখ খুলেছেন, যখন ভারতীয় বোর্ড সভায় বসেছিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। বৈঠকের কাছাকাছি সময়েই আছড়ে পড়ে সচিনের মন্তব্য।
চব্বিশ ঘণ্টা আগে গাওস্কর একই সুরে বলেছিলেন, ‘‘দেশ যা সিদ্ধান্ত নেবে অবশ্যই তার সঙ্গে আছি। কিন্তু ভেবে দেখা দরকার বিশ্বকাপে পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট করলে কাদের লাভ হবে? ভারতের দুই পয়েন্ট যাবে আর পাকিস্তান সেই দুই পয়েন্ট পাবে। তাতে ওদেরই তো সুবিধে হবে।’’ দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেটের নামী ব্যক্তিত্বরাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা নিয়ে দু’ভাগ হয়ে গিয়েছেন। এমনিতেই দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলে না ভারত। একমাত্র বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক মানের বহুদেশীয় ইভেন্ট হলে সেখানে খেলেন বিরাট কোহালিরা। তাই প্রশ্ন উঠছে, নতুন করে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক ছিন্ন করার রাস্তাই বা আর খোলা আছে কি না।
ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীও এ দিন বলেছেন, ভারত সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তাঁরা সেটাই মেনে নেবেন। শাস্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয় বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা উচিত না বয়কট করা হবে? শাস্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘এ ব্যাপারে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তার পক্ষে আছি। সরকার যদি বলে এখন খেলার মতো অবস্থা নেই, তা হলে সেটাই মানব।’’ ভারতীয় দলের লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহালও শুক্রবার বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার সিদ্ধান্ত তাঁরা ক্রিকেট বোর্ডের হাতেই ছাড়ছেন। ‘‘এটা আমাদের হাতে নেই। বোর্ড যদি বলে আমাদের খেলতে আমরা খেলব। যদি বলে বয়কট করা হবে, তা হলে আমরা সেটাই মেনে নেব।’’ চহাল এর আগে একটি চ্যানেলে পুলওয়ামার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে উত্তেজিত মন্তব্য করেছিলেন পাকিস্তান নিয়ে। এখনও তিনি বলছেন, ‘‘যারা এমন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চরম শাস্তি দেওয়া উচিত।’’ কিন্তু আগের সেই হুঙ্কারের সুর নরম করে তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানে নির্দোষ মানুষও আছেন। তবে যারা এই আক্রমণের পিছনে আছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার সময় এসেছে।’’ আরও বলছেন, ‘‘আমরা যদি চুপচাপ বসে থাকি, কোনও কিছুই পাল্টাবে না।’’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।