নিউজিল্যান্ড সফরের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে ২ উইকেটে হারলেও ব্যাট-বলের প্রস্তুতিটা একেবারে মন্দ হয়নি। ব্যাট হাতে বিপর্যয় যেমন দেখা গেছে তেমন বিপর্যয় কাটিয়ে আবারো ম্যাচে ফেরার চিত্র দেখা গেছে সফরকারীদের। আবার বল হাতে শুরুতে ছন্দ দেখাতে না পারলেও শেষ দিকে দারুণ লড়াই করেছে। বাংলাদেশের দেয়া ২৪৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দারুণ সূচনা পায় নিউজিল্যান্ড একাদশ। ওপেনিং জুটিতে জিট রাভাল এবং অ্যান্ড্রু ফ্লেচার করেন ১১৪ রান। ২২তম ওভারে সফরকারীদের প্রথম উইকেট এনে দেন নাঈম হাসান। ৫২ রানে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দী হন রাভাল।
দ্বিতীয় উইকেটে নামা শেন সোলিয়াকেও বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে দেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে তিনি করেন ১১ রান। দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় টাইগাররা। তবে আরেক ওপেনার ফ্লেচার দলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর পাশাপাশি এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে। যদিও তার সেঞ্চুরি আটকে দেন মোস্তাফিজ। এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়ার আগে তিনি খেলেন ৯২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। আর তাতেই মূলত বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। যা শেষ পর্যন্ত আর সামাল দিতে পারেননি সফরকারী বোলাররা।
ম্যাচের ৩৬ ওভারে রাচিন রাভিন্দ্র সৌম্য সরকারের শিকারে পরিণত হওয়ার সময়ও মনে হচ্ছিল, সহজ জয়ই পেতে যাচ্ছে স্বাগতিকরা। তবে ম্যাচ শেষে চিত্রটা ছিল একোবারেই অন্যরকম। রাভিন্দ্র ফিরে যাওয়ার পর ফিন অ্যালেন এবং কাটিনে ক্লার্ক সহজ জয়ের দিকে নিয়ে যান দলকে। তবে শেষ দিকে জ্বলে উঠেন মাহমুদুল্লাহ, মেহেদী মিরাজ এবং মোস্তাফিজুর রহমান। মাহমুদুল্লাহর বলে অ্যালেন ফিরে যাওয়ার পর ক্লাক এবং ফিলিপসকে ফিরিয়ে খেলা জমিয়ে তোলেন মেহেদী মিরাজ। এরপর ভ্যান ওরকমকে শূন্য (০) রানে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দিলে অপ্রত্যাশিত চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড একাদশ। তবে শেষ পর্যন্ত ১১ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটের জয় পায় স্বাগতিকরা।
বল হাতে দু’টি করে উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান এবং মাহমদুল্লাহ রিয়াদ। নাঈম হাসান এবং সৌম্য সরকার তুলে নেন একটি করে উইকেট। এর আগে নিউজিল্যান্ড একাদশকে ২৪৮ রানের লক্ষ্য দেয় সফরকারী বাংলাদেশ একাদশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এছাড়া মুশফিকুর রহিম ৬২ এবং সাব্বির রহমানের ব্যাট থেকে আসে ৪০ রান।
লিঙ্কনে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে স্বাগতিকদের আমন্ত্রণে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো সূচনা এনে দিতে পারেননি লিটন দাস এবং মুমিনুল হক। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ১০ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুমিনুল। এর পরপরই তার দেখানো পথে হাঁটেন লিটনও। ১০ বলে ৩ রান করেন তিনি। এরপর মুশফিকের সঙ্গ দিতে আসেন সৌম্য সরকার। কিন্তু দলকে বিপদ থেকে উদ্ধারের বদলে তিনি উল্টো বিপাকে ফেলেন ৯ বলে ১ রানে আউট হয়ে। সুবিধা করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুনও। ৫ বল খেলে তিনি আউট হন ১ রানে। টপ অর্ডারের বিপর্যয়ে ৩১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা।
এরপর পঞ্চম উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন মুশফিক ও রিয়াদ। দু’জনে মিলে যোগ করেন ১০৮ রান। অর্ধশতকের দেখা পান উভয়ই। ৪৬ বলে অর্ধশতক তুলে নেন মুশি। আর অর্ধশতক তুলে নিতে ৬৬ বল মোকাবেলা করেন রিয়াদ। ৬১ বলে ৬২ রানে মুশফিক বিদায় নিলে দলীয় ১৩৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় টাইগাররা। মুশফিক ফিরে যাওয়ার পর সাব্বিরকে সাথে নিয়ে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন রিয়াদ। দু’জনে মিলে গড়েন ৩৫ রানের জুটি। এরপর বড় শট খেলতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থার্ডম্যানে ক্যাচ দিলে বিচ্ছিন্ন হয় জুটিটি। আর রিয়াদ থামেন ৮৮ বলে ৭২ রানে।
তার কিছুক্ষণ পর অধিনায়ক মিরাজও সাজঘরে ফিরলে ১৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে সফরকারীরা। দলের এমন পরিস্থিতিতে লড়ে যান সাব্বির। ৪১ বলে ৬ চারে ৪০ রানের ইনিংস খেলে তিনিও আউট হলে বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হয় সফরকারীরা। শেষ দিকে নাঈম হাসানের অপরাজিত ১৭ ও মোস্তাফিজের ১২ রানে ভর করে অল-আউট হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে ২৪৭ রান যোগ করতে সক্ষম হয় সফরকারীরা। স্বাগতিক বোলারদের মধ্যে ম্যাকপিক ৩৮ রানের বিনিময়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট লাভ করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ একাদশ: ২৪৭/১০ (৪৬.১); লিটন ৩ (১০), মুমিনুল ৬ (১০), সৌম্য ১ (৯), মুশফিক ৬২ (৬১), মাহমুদউল্লাহ ৭২ (৮৮), সাব্বির ৪০ (৪১), মিরাজ ৭(৮), নাঈম ১৭* (২৩), শফিউল ৪ (৮), মোস্তাফিজ ১২* (১৪); ম্যাকপিক ৮.১-০-৩৮-৪।
নিউজিল্যান্ড একাদশ: ২৫১/৮ (৪৮.১) রাভাল ৫২ (৬৩), ফ্লেচার ৯২ (১১২), অ্যালেন ৩০ (৩০), ক্লার্ক ১৯; মোস্তাফিজ ৯-৩-৩৩-২, মেহেদী হাসান ১০-১-৪৬-২, নাঈম ৭-০-৪৩-১, মাহমুদুল্লাহ ৭.১-০-৩৭-২, সৌম্য ৬-০-২৮-১।
নিউজিল্যান্ড একাদশ ২ উইকেটে জয়ী।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।