মেরিনা বেগম টাকা দিয়েও দুর্যোগ সহনশীল ঘর পাননি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ১৮ই অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৯ অপরাহ্ন
মেরিনা বেগম টাকা দিয়েও দুর্যোগ সহনশীল ঘর পাননি

‘দুই মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করে, দুই বছর ধরে স্বামী পঙ্গু। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করি। দুর্যোগ সহনশীল ঘরের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে চার হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার পরও ঘর দেননি। একটি কুঁড়েঘরে অতিকষ্টে কোনো রকম কেটে যাচ্ছে।’ কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কলোনীপাড়া গ্রামের জয়েন উদ্দিনের স্ত্রী মেরিনা বেগম (৪৫)।

মেরিনা বেগম বলেন, বসতবাড়ির পাঁচ শতক জমিতে একটি কুঁড়েঘরে দুই মেয়ে আর পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। গত বছরের নভেম্বর মাসে ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হককে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের ঘরের জন্য চার হাজার টাকা দেই। কিন্তু আরও ছয় হাজার টাকা দিতে না পাড়ার কারণে আমাদের ঘর দেননি।

তিনি আরও বলেন, স্বামী দুই বছরেরও বেশি সময় হাঁটতে পারে না। যেটুকু জমি ছিল বিক্রি করে চিকিৎসা করেয়েছি। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দুই মেয়ে সোমা আক্তার ও খুশি আক্তারের পড়াশোনা করাচ্ছি। সোমা আক্তার জটুয়াখাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। সে বিদ্যালয় থেকে উপবৃত্তিও পায় না। অপরদিকে ছোট মেয়ে দক্ষিণ খড়িবাড়ী মুক্তা নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বড় মেয়ে মৌসুমীর দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। জয়েন উদ্দিন (৬০) বলেন, সরকারি কোনো সুযোগ নাকি আমাদের জন্য নাই, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতার জন্য টাকা লাগে। টাকা দিতে না পারায় চেয়ারম্যান ঘর দেননি।এনিয়ে প্রশাসনে অভিযোগ করেননি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন তো চেয়ারম্যানের। ঘরের জন্য টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হকের কাছে চার হাজার টাকা দিয়েছি।

অপরদিকে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের মশিয়ার রহমানের ছেলে মজিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, দুর্যোগ সহনশীল ঘরের জন্য টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের তেলির বাজারের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে স্বপনের হাতে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছি। স্বপন সেই টাকা ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হককে দেন। এ ব্যাপারে স্বপনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি ১০ হাজার টাকা নিয়াছি।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টেপাখড়িবাড়ীর ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক ও তথ্য কেন্দ্রের মিজানুর রহমান ২২০টি পরিবারকে ঘর দেয়ার নামে প্রতিটি পরিবারের নিকট ৪ থেকে ১৪ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যানের প্রভাবের কারণে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়ার সাহস পাচ্ছেন না। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের মিজানুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রার না দেখে কিছু বলা যাবে না। টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ইতোমধ্যে ২৫টি ঘর দেয়া হয়েছে। তালিকা তৈরি করা হচ্ছে আগামীতে আরও ঘর দেয়ার জন্য।

টাকার নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ টাকা নিয়েছে কি-না আমার জানা নেই। জয়েন উদ্দিনের স্ত্রীকে আমি চিনি না। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের ঘুষ নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে কোনো ঘর বরাদ্দ দিতে পারেন না। উপজেলা প্রশাসন তদন্ত করে বরাদ্দ দিয়ে থাকে। নতুন করে ঘরের কোনো বরাদ্দ তার দফতরে নেই। নীলফামারীর জেলা প্রশাসক হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের ঘর দেয়ার নামে কেউ অনিয়ম বা টাকা উত্তোলন করে থাকলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।