ক্যাসিনোতে জড়িত ১০ সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৬:৩৬ অপরাহ্ন
ক্যাসিনোতে জড়িত ১০ সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে

সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। এরই মধ্যে অবৈধ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আলোচিত কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।জুয়া বা ক্যাসিনো অভিযান চালাতে গিয়ে ঢাকায় এর বিস্তার হওয়ার পেছনের রহস্য উদঘাটন করেছে আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া এ অভিযানকে কেন্দ্র করে ঢাকার অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাসিনো ব্যবসার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নাম আসা সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখার নির্দেশনা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউ’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (স্থগিত) করা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেকেরই ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে সাংবাদিকরাও আছেন।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চাহিদার পাশাপাশি পত্রিকা বা কোনও গণমাধ্যমে কারও নাম আসলে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ নিতে হয়। সে কারণে অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। রাজধানীর প্রীতম-জামান টাওয়ারে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে দুজন সাংবাদিকের সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন মডেল থানার ওসি মাহমুদুল হক মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। আরও কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা বিভিন্ন ক্যাসিনো মালিকের কাছ থেকে নিয়মিত আর্থিক সুবিধা নিতেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোয় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) গুলশানের নিকেতন থেকে গ্রেফতার করা হয় ঠিকাদার জি কে শামীমকে। একই দিন গ্রেফতার হন কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি সফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ। এরপর গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ক্যাসিনোয় অভিযান চালানো হয়েছে। এর জেরে খালেদ, শামীম, ফিরোজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনসহ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।

রাজধানীর অভিজাত বিভিন্ন এলাকায় ৬০টি ক্যাসিনোসহ সারাদেশে দুই শতাধিক ক্যাসিনো বা জুয়ার ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিন শতাধিক ব্যবসায়ী। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ক্লাব পরিচালনায় উচ্চ পদে রয়েছেন এসব অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত অনেক ব্যক্তি। বৈধ-অবৈধ অস্ত্র ও বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করেন তারা। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মন্ত্রীর মতো প্রটোকল নিয়ে চলাফেরার কারণে এদের দাপটে তটস্থ থাকে লোকজন। এদের সিংহভাগই বিদেশে গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোম। সম্প্রতি অভিযানের মুখে অধিকাংশ ক্যাসিনো বন্ধ করে গ্রেফতার এড়াতে এখন তারা পালাচ্ছেন। অনেকে দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে পালানোরও পথ খুঁজছেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব