মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৪নং আপার কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি, মোকামবাড়ি, নোয়াপাড়া এলাকার সর্বস্তরের কৃষক শ্রমিক মৎস্যজীবী জনসাধারণ উপস্থিতিতে হাওর রক্ষা আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলার উদ্যোগে রবিবার দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে
একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
হাওর রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ শাহিন ইকবালের সঞ্চালানয় এবং হাওর রক্ষা আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলার আহবায়ক আ স ম সালেহ সোহেল এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিবেশ রক্ষার অন্যতম নেতা আব্দুল করিম কিম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হাওর রক্তা আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলার সদস্য সচিব জনাব এম এ খসরু চৌধুরী, হাইল হাইল রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও হাওর রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মোঃ খায়রুল ইসলাম, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রভাষক মোহাম্মদ সেলিম।
আরো বক্তব্য দেন মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, ডাক্তার রওশন আহমদ, কাউয়াদিঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জনাব শামসুদ্দিন মাস্টার পূবের হাওর কৃষকদের প্রতিনিধি আব্দুস সুবহান, মাওলানা মহসিন আজহার, শামিমুর রহমান, গোলজার মিয়া প্রমুখ।
বিকল্প জায়গা থাকতে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও কৃষিজমি নষ্ট করে 'পূবের হাওরে' ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন প্রতিরোধের আহবান জানান।
তারা বলেন, মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার ৪ নং আপার কাগাবালা ইউনিয়নের আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া গ্রাম-সহ আশপাশের ১৫ হাজার কৃষক-মৎস্যজীবি জনগণের মিঠাপানির মাছ, ভাত ও কৃষিজ ফসল উৎপাদনের চাহিদাপূরণ করছে 'পূবের হাওর' নামের হাওরটি। যুগযুগ ধরে এ এলাকার প্রায় আড়াই হাজার কৃষক-মৎস্যজীবি পরিবারের জীবন-জীবিকা এই হাওরের উপর নির্ভরশীল। উল্লিখিত তিনগ্রামের মানুষের কৃষিজ উৎপাদনে এ পূবের হাওর-ই একমাত্র হাওর।
আপনারা ইতোমধ্যে নানা মাধ্যমে জেনেছেন যে, পূবের হাওরের ১০০ একর ফসলী ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে Moulvibazar Solar PV Park নামীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে, চিরতরের জন্য পূবের হাওরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ফসলী জমির কৃষিজ উৎপাদন হারিয়ে গেছে। অথচ, এ হাওরের জমিতে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান ২০০৪—২০০৫ অর্থ-বছরে রাবার ড্যাম্প প্রকল্প করে স্থানীয় গোপলা নদী থেকে শীত মৌসুমে হাওরে পানি আনার ব্যবস্থা করেছিলেন।
পূব-হাওরে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে এতো বেশি পরিমাণ কৃষি জমির অপচয় হবে ব'লে আমরা কৃষকরা বুঝিনি। তাছাড়া কোম্পানির লোকেরা সৌরবিদ্যুত স্থাপনের আগে স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষক-মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাছে প্রচার করতো যে, সৌরবিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনে ধান-মাছ চাষের কোনোরূপ ক্ষতি হবে না। তাদের আশ্বাসে ভরা কথাগুলো এখন মিথ্যা প্রমাণ হচ্ছে। অর্থাৎ সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের দখলী ভূমিতে ধান, মিঠাপানির প্রাকৃতিক মাছ বা অন্য কোনো ফসলের চাষাবাদ হবে না।
বর্ণিত অবস্থায় এই পূব-হাওরের এক তৃতীয়াংশ কৃষিজ ভূমি কৃষি-কাজের জন্য অকার্যকর করার পরেও আমরা শুনেছি, হাওরের বাকি দুই তৃতীয়াংশ কৃষি জমি জুড়ে আরও ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প করা হবে। এবং সাথে হাওর ভরাট করে নানা-ধরনের শিল্প কারখানাও হবে। তারমানে হলো এই পূবের হাওরের কৃষিজ উৎপাদন, জলজ উদ্ভিদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। হাওরকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহকারী কষক মৎস্যজীবি কর্মহীন হবে এবং এলাকার বনেদী কৃষক পরিবারগুলোও ১২ মাস কিনে খেতে হবে।
ছোট্ট একটি দেশ আমাদের। জনসংখ্যার তুলনায় কৃষিজমি নিতান্ত অপ্রতুল। সবুজ জ্বালানি উৎপাদনের বিকল্প জায়গা ভূমি-পরিবেশ-জলাধার আইন লঙ্ঘন করে, কৃষিজমি এবং হাওরকে ধ্বংস করে এমন প্রকল্প গ্রহণ কৃষিজ উৎপাদন ও কৃষক সহায়ক নীতির হতে পারে না। এমন ধ্বংস যজ্ঞের পরিবেশ ছাড়পত্র, ভূতাপেক্ষ ছাড়পত্র কিভাবে দেওয়া হয়েছে বা হবে তা আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না।
অতএব, আমাদের এলকার মানুষের জীবন-যাপন ও জীবন-জীবিকার অংশ 'পূবের হাওর' এর বাকি অংশ বাঁচাতে আমরা মৌলভীবাজারবাসীর সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতা চাই। কৃষি, কৃষক ও হাওর-পরিবেশ রক্ষার লড়াই-সংগ্রামে পাশে পেতে চাই।
পরিশেষে সংক্ষিপ্ত মিছিল শেষে সভাপতির বক্তব্যর মাধ্যমে মানববন্ধনের কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।