প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১২:৩৬
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীতে অবস্থানরত এলএনজিবাহী জাহাজ থেকে গ্যাস সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, যার পরিণতিতে চট্টগ্রামে চরম গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, নগরীর অধিকাংশ এলাকায় আবাসিক, শিল্প ও পরিবহন খাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করে এবং বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। রান্নার গ্যাস না থাকায় সাধারণ মানুষ হোটেল-রেস্তোরাঁতে ছুটে গেলেও সেখানেও খাবারের সংকট দেখা যায়। অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। কেউ কেউ লাকড়ি ও বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করে রান্নার চেষ্টা চালিয়েছেন।
শুধু বাসাবাড়ি নয়, শিল্পকারখানাও এই সংকটে বিপর্যস্ত। বায়েজিদ, ইপিজেড, কালুরঘাটসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। অনেক কারখানায় রাত থেকেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় অর্ডার অনুযায়ী উৎপাদন সম্ভব হয়নি, ফলে রপ্তানিমুখী শিল্প বিশেষ করে পোশাক খাতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গ্যাসের অভাবে নগরীর সিএনজি স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় সড়কে টেম্পো, অটোরিকশা ও বাসের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যারা আগের রাতে গ্যাস সংগ্রহ করেছিল, তারা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে।
নগরীর চকবাজার, হালিশহর, আগ্রাবাদ, কাট্টলী, খুলশীসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস নেই, ফলে সাধারণ মানুষ খাবার প্রস্তুত, বাচ্চাদের খাবার গরম বা রোগীর জন্য দুধ সেদ্ধ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের পূর্বঘোষণা না থাকায় নগরবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
জিটিসিএল সূত্র জানায়, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এলএনজিবাহী বিশেষায়িত জাহাজ থেকে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো, কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১৯৫ মিলিয়নে। এরপর থেকে সরবরাহ একেবারে বন্ধ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু করা সম্ভব নয়। নগরবাসী এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য, কিন্তু ঠিক কবে নাগাদ সমস্যা সমাধান হবে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রামে একযোগে বাসাবাড়ি, হোটেল, পরিবহন এবং শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সংকট দীর্ঘায়িত হলে এটি অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় নাগরিক সংগঠনগুলো গ্যাস সরবরাহ সংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, এই ধরনের জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।