প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২১:২৯
**সিলেট প্রতিনিধি:** সুরমা নদী, যা একসময় ছিল সিলেট অঞ্চলের প্রাণ, আজ মৃতপ্রায়। আসামের বরাক নদী থেকে প্রবাহিত হয়ে সুরমা দিনে দিনে মরে যাচ্ছে। বছরের অধিকাংশ সময় নদীটি পানি শূন্য থাকে, ফলে শুষ্ক মৌসুমে হাঁটুপানি পার করে নদী পার হওয়া যায়। নদীর উৎসমুখে জমে থাকা পলি এবং ভরাটের কারণে বর্ষাকালে বন্যার তাণ্ডব অব্যাহত থাকে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর, ২০২৩ সালে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণার মাধ্যমে নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে, এই প্রকল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম মন্তব্য করেন, “নদী খননের নামে ৫০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। প্রকল্পটির কোনো স্বচ্ছতা নেই।” তিনি সতর্ক করে দেন, সুরমা-কুশিয়ারা নদীসহ সকল নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। এজন্য একটি তদারকি কমিটি গঠনের দাবি জানান।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, “বিগত সরকারের নেতারা যৌথভাবে এই প্রকল্পে লুটপাট করেছেন। আমরা বিচারের দাবী জানাচ্ছি।” জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, “অতীত সরকারের আমলে সরকারি কাজের মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নতুন সরকারকে অনিয়ম রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “অনিয়ম তদন্তে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন জরুরি।” পাউবো’র উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাজু সিকদার জানান, প্রকল্পের ব্যাপারে তার তেমন কিছু জানা নেই।
এদিকে, সুরমা নদীর দৈর্ঘ্য ২৪৯ কিলোমিটার, যা ভারতের আসাম থেকে প্রবাহিত হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। নদীর উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে পানির প্রবাহ ৫ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এই কারণে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জীবনে দুর্দশা নেমে এসেছে। কৃষক সওয়ার আলী জানান, “পানি না পাওয়ার কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষায় নদী ভরে বন্যা হয়।”
সরকারি তথ্য মতে, নদী খননের জন্য একাধিক প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আছে, তবে প্রকল্প অনুমোদন পেলে ড্রেজিং শুরু হবে। সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, নদীর নাব্যতা বজায় রাখতে ধারাবাহিক ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতিতে, সুরমা নদী রক্ষায় সতর্কতার পাশাপাশি উন্নত পরিকল্পনার মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। জনগণের দাবি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকল্পের অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।