প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০:২৬
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সরিষা ফুলের হলুদ রঙে সেজেছে উঠেছে ফসলের মাঠ । যতদূর দু'চোখ শুধু হলুদ আর হলুদ। পুরো মাঠ যেন হলুদ গালিচায় ঢেকে গেছে। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে গ্রামীণ জনপদ হয়ে উঠেছে আরো মনোমুগ্ধকর। সেই সাথে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌয়ালরা। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছে এসব মৌয়াল। বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি বের হয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষার ফুলে ফুলে। মৌমাছি সরিষার ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করে। এতে সরিষা ফুলে সহজেই পরাগায়ন ঘটে। সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষের বাক্সস্থাপন করলে, সরিষার ফলন অন্তত ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। একই সাথে মধু আহরণ করে লাভবান হচ্ছে মৌচাষিরা। এছাড়াও সরিষা থেকেই তৈরি হচ্ছে খাঁটি সরিষার তৈল, গরুর স্বাস্থ্যকর খাবার, খৈল এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সরিষার গাছ। সরিষা চাষে খরচ কম ও বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলা জুড়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপকভাবে সরিষা চাষ হয়েছে কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে চলতি বছরে সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ফলদা ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। মৌচাষীরা সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষ করছে সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তাদের বাক্স থেকে দলে দলে উড়ে যাচ্ছে পোষা মৌমাছি, আর সংগ্রহ করছে মধু। মুখভর্তি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরছে বাক্সে রাখা মৌচাকে। সেখানে সংগৃহীত মধু জমা করে আবার ফিরে যাচ্ছে সরিষা ক্ষেতে। ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে সরিষার পরাগায়নেও সহায়তা করে। মৌয়ালরা পোষা মৌমাছি দিয়ে প্রচুর মধু উৎপাদন করে যেমন লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় চাষিরাও বাড়তি আয়ের আশা করছেন। বর্তমানে মৌ চাষে প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৫ থেকে ৬ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৪'শ থেকে ৫'শ টাকায়।
মৌয়ালরা বলেন, আমরা প্রতি বছর সরিষা ক্ষেত থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করে থাকি। সরিষার মধু নির্ভেজাল হওয়ায় এ মধুর চাহিদা অনেক বেশি, খেতেও অনেক সুস্বাদু। সরিষা খেতের পাশে বাক্স বসিয়ে এভাবে আমরা মধু সংগ্রহ করে সেগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। আর সরিষার মৌসুমে মধু বিক্রি করে সারা বছর আমাদের সংসার চলে। আগে সরিষা চাষিরা মনে করতো যে এভাবে মধু সংগ্রহ করলে সরিষার ক্ষতি হয়। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পেরেছে মধু সংগ্রহে সরিষার ফলন আরো ভাল হয়।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সরিষা চাষিরা বলেন, আমাদের এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি বছর সরিষার ভালো ফলন হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আবাদ বেশি হয়েছে। আমরা যেসব জমি পতিত রাখতাম সেসব জমিতেও এখন সরিষার আবাদ করেছি। এছাড়া সরিষা খেতের পাশে মৌচাক বসানোর কারণে সরিষা খেতে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না এমনকি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে এ বছর ৬'শ হেক্টর আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় উভয় জাতের সরিষা কৃষকরা চাষ করেছে। আমরা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও সরিষার বীজ বিতরণ সহ মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সরিষা খেতের পাশ দিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য ৭০০ টি বক্স স্থাপন করা হয়েছে মৌয়ালরা। এবছর সরিষা থেকে ৬ টনের বেশি মধু আহরণ হবে।