প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ১৯:২২
ভূঞাপুরের যমুনার চরাঞ্চলে চলতি বছরে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টা সংরক্ষণ ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে এখানকার কৃষাণ কৃষাণীরা। বন্যা পরবর্তী সময়ে যমুনার বুকে জেগে উঠা বালুচরে ভুট্টা চাষ করে তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন এখানকার কৃষকেরা। চলতি বছরের বন্যায় উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে যমুনার বুকে জেগে উঠা বালুচরে ভুট্টা চাষ করেন ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষক। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে ভুট্টা চাষিদের মাঝে উন্নত মানের ভুট্টার বীজ ও সার বিতরণ করেছেন। এছাড়া কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। ভুট্টা চাষ অত্যন্ত সহজ ও লাভজনক। তাছাড়া অন্যান্য ফসলের মতো সার ও সেচের তেমন প্রয়োজন হয়না। হাট-বাজার গুলোতেও চরাঞ্চলের অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টার চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতি মন ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ৯’শ টাকায়।
উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের যমুনা চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষি আলী আজগর, রেজাউল, আব্দুর রশিদ, গফুর মিয়া বলেন, প্রতি বছর বন্যায় আমাদের বীজতলা, সবজি খেত সহ সকল ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হই। আর এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা পরবর্তী সময়ে যমুনার বুকে জেগে উঠা চরে আমরা ভুট্টা চাষ করি। ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম ও লাভ অনেক বেশি। আর এই ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি অনেকটাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি।
রামপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ার আমাদের চরাঞ্চলের ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আশা রাখি বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ ফলন পাবো। বাজার ভালো থাকলে পাঁচ বিঘাতে খরচ বাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে।
উপজেলার গোবিন্দাসী হাটে ভুট্টা বিক্রি করতে আসা কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, আমাদের স্থানীয় হাট-বাজার গুলোতে চরাঞ্চলের অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টার চাহিদা ও দাম অনেক মোটামোটি ভালো। এ বছর বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। বাজারে প্রতি মন ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ভুট্টা ৮ থেকে ৯’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের যমুনা চরাঞ্চলের বালি মাটি ভুট্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বন্যা পরবর্তী সময়ে এখানকার কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা চাষ করেন।
বাজারে ভুট্টার ভালো দাম পাওয়ায় প্রতিবছর কৃষকদের মাঝে ভুট্টা চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরে উপজেলার চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে উন্নত মানের ভুট্টার বীজ ও সার বিতরণ করেছি। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আমরা কৃষকদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। গতবছর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৯৯৫ হেক্টর। এ বছর এর লক্ষ্যমাত্রা হয়েছে ২ হাজার ১৫২ হেক্টর।