প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২১, ১:২৯
স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও মাস্ক পড়তে অনীহা প্রকাশ সর্বসাধারণের। দিনাজপুরের হাকিমপুর( হিলি) উপজেলার হাটবাজার, বন্দর এলাকা, চায়ের দোকান ও রাস্তাঘাটে অধিকাংশ স্হানে মানুষের মাস্ক পড়ার বালাই নেই।
যার ফলে করোনা সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা অজুহাতে মাস্ক পড়তে নারাজ হিলিতে বাজার করতে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা, রিকশা-ভ্যানচালকসহ অধিকাংশ মানুষ।
দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন তথ্যমতে প্রথম এর দিকে হাকিমপুর উপজেলায় সংক্রমণের হার তুলনামূলক কম থাকলেও বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ছয়জনসহ সম্প্রতি গত ১১ দিনে হিলিতে নতুন ২৭ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এপর্যন্ত উপজেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৪ জন। এদের মধ্যে একজন মৃত্যু, ৯৬ জন সুস্থ ও ২৭ জন নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরত আসা যাত্রীর মধ্যে ছয়জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে স্হানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা আক্রান্তদের দিনাজপুর মেডিকেল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইশোলেশনে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
১৩ জুন সকালে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিপণী বিতান থেকে শুরু করে সব দোকানে " নো মাস্ক নো সেল " সাইনবোর্ড সোভা পেলেও অধিকাংশ দোকানে ক্রেতা- বিক্রেতা মাস্ক ছাড়ায় ক্রয় বিক্রয় করছে।
বাজারের দোকানগুলোতে গাদাগাদি করে পণ্য কেনাকাটা, চায়ের দোকান, শহরের বিভিন্ন মোড়ে আড্ডা দেখে বোঝার উপায় নেই, বর্তমানে দেশে মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি অভাব বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের হার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছে তারা।
বাজারে আসা অনেক মানুষ মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছে আবার কেউ কেউ পরলেও স্টাইল করে মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে রেখেছেন। অনেকের পকেটে সোভা পাচ্ছে মাস্ক। মাস্ক না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে, একজন বলে মাস্ক পরলেই কি করোনা দরবে না, কেউ বলছে মাস্ক বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে অতিরিক্ত গরম লাগে, মাস্ক পরলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। আর একজন বলে মাস্ক পড়ি তবে নামাজ পড়ে আসলাম তাই পকেটে আছে ভাই। এদিকে খেটে খাওয়া মানুষ, দিন মজুর,কুলি শ্রমিক ও রিকশা ভ্যানচালকরা বলছে গরীবের করোনা বলতে কিছু নাই।
এসব কারণে হিলিতে দিন দিন করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন বাজারের ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল।
এদিকে হিলি বন্দর এলাকার স্হানীয় উজ্জ্বল মিয়া বলেন, সম্প্রতি সময়ে ভারতে করোনা মহামারি আকারে দেখা দিলেও, প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় একশ-দেড়শ পণ্যবাহী ট্রাক হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে। ওই ট্রাকের সঙ্গে দুইশ-তিনশ ড্রাইভার হেলপার আসছে। তারা বন্দরের ভিতরে বাংলাদেশীদের সাথে এবং বাহিরে চায়ের দোকানে দেদারসে আড্ডা দিচ্ছে, ঘোরাফেরা করছে। এতে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বন্দরের মানুষ আতংকের মধ্যে আছি।
এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম মুঠো ফোনে বলেন, বর্তমানে আমরা ভারত থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষাসহ ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করছি এবং যদি কোন যাত্রীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় সঙ্গে সঙ্গে তাদের দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়। বাকীদের স্হানীয় আবাসিক হোটেল কোয়ারান্টাইন রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও স্হানীয় যারা নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন আমরা তাদের বাড়িতে "লাল পতাক" উড়িয়ে চিহ্নিত করছি। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসার পরামর্শসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন,স্বাস্থ্য বিধি না মানা ও মাস্ক পড়তে অনীহা প্রকাশ ও মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে আজ থেকে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। আমি বুঝি না প্রশাসন গেলে সবাই মাস্ক পড়ে আবার আসার সঙ্গে সঙ্গে খুলে পকেটে বা তুথনীতে ঝুলিয়ে রাখে। এটা অবশ্যই মাস্ক পড়তে অনীহা প্রকাশ।
#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১