নওগাঁয় ফুলকপির ভালো ফলনেও কৃষকদের চোখে জল

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৯ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৭:১১ অপরাহ্ন
নওগাঁয় ফুলকপির ভালো ফলনেও কৃষকদের চোখে জল

শীতের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি ফুলকপি এবার ভালো ফলন দিলেও নওগাঁর কৃষকরা পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে। প্রতি পিস ফুলকপি পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র আট আনা থেকে দুই টাকার মধ্যে, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।


বৃহস্পতিবার নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের ডাক্তারের মোড়ে দেখা যায়, ভোর থেকে কৃষকরা ফুলকপি বিক্রির জন্য এসেছেন। তবে সেখানেও ক্রেতার দেখা মেলা ভার। কৃষকদের অভিযোগ, গত বছর ফুলকপির ভালো দাম পাওয়ায় তারা এবার বেশি জমিতে চাষ করেছিলেন। কিন্তু ফলন ভালো হলেও বাজারে এমন ধস নেমেছে যে খরচ তো উঠছেই না, বরং ধারদেনা শোধ করা নিয়েই তারা চিন্তিত।


ফুলকপি বিক্রি করতে আসা আকবর হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১৭-১৮ হাজার টাকা। অথচ বিক্রি করতে গিয়ে প্রতি পিস কপি মাত্র ১-২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পুরো জমির কপি বিক্রি করেও ২,৫০০-৩,০০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। আকবর বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে চলব? ধারদেনা শোধ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।”


এনামুল হক নামে আরেক কৃষক বলেন, “এক বিঘা জমির কপি চাষে ৬-৮ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ এখন কপির দাম মাত্র ৮ আনা, ১ টাকা বা দেড় টাকা। ভ্যান ভাড়াই উঠে আসছে না। জমিতে থাকা বাকি কপিগুলো গরুকে খাওয়ানো ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।”


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার নওগাঁ জেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৬,২০০ টন ফুলকপি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরবরাহ বেশি থাকায় বাজারে এমন দাম ধস দেখা দিয়েছে।


কৃষকদের মতে, মৌসুমের শুরুতে ফুলকপির দাম চড়া থাকলেও বর্তমানে অতিরিক্ত উৎপাদন ও চাহিদার অভাবে দাম পড়ে গেছে। এর ফলে ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।


কৃষকরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেন বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ফুলকপি সংরক্ষণ ও রপ্তানির ব্যবস্থা করলেও কৃষকদের এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।