মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গত কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে আসা ঢলে হাওরে বেড়েছে বানের পানি। এতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর আমন ধানের ক্ষেত ও আগাম চাষ করা শীতকালীন নানা ধরণের শাক-সবজি। ভেসে গেছে শতাধিক মাছের খামার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট ব্রিজ ও কালভার্ট। আবার বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। পাকা আউস ধান কাটতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষীরা।
নিমাঞ্চল এলাকায় বসত ভিঠায় উঠেছে বন্যার পানি। ফলে পানিবন্দি হয়েছেন হাওর পাড়ের শতাধিক পরিবার। সরজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার হাইল হাওর, বাইক্কাবিল, সবুজবাগ, জতরপুর, ভুনবীর, পাচাউন, কালাপুর, ভৈরববাজার, সিন্দুরখান, সাতগাঁও, লামুয়া গ্রামের শত শত একর জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানক্ষেতে থৈথৈ করছে পানি। স্থানীয় মৎস খামারিরা জানান, প্রবল বৃষ্টি ও উজানের পানিতে উপজেলার বেশ কয়েকটি মাছের খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি গুণতে হবে খামারিদের।
শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের হাইলহাওর এলাকার খামারের মালিক সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, বন্যার পানিতে আমার ফিসারির সব মাছ বানের স্রোতে ভেসে গেছে। এতো আমার কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের জতরপুর গ্রামের মাছ চাষি কামাল মিয়া বলেন, আমার ৭টি মাছের খামার তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে অন্তত ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মাছ হাওরে ভেসে গেছে।
দক্ষিণ পাচাউন কিলগাও এলাকার কৃষক মইনুল ইসলাম গেদু বলেন, আমার চার বিঘা আমন ক্ষেত রয়েছে পানির নীচে। চোখের সামনে ক্ষেতের সব ধান পানিতে ডুবে রয়েছে। কাটাও যাচ্ছে না আধা পাকা ধানগুলো। চোখের সামনেই ধান পানির নিচেই পচে নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার লামুয়া গ্রামের কৃষক শামসুল হক বলেন ২০০৪ সালের পর এবছরই শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরে বন্যার পানি বেশি হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মহিউদ্দিন এর মুঠোফন বন্ধ পেয়ে অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ফারাজুল কবীর বলেন, কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে বেশ কয়েকটি মাছের খামার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রচুর মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যায় উপজেলার প্রায় সাড়ে আট শত পুকুর ও খামারের মাছ পানিতে ভেসে আনুমানিক ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, বন্যার পানিতে শ্রীমঙ্গলের কিছু এলাকায় আমনের বীজতলা-সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে শুনেছি। তবে অন্যান্য উপজেলার তুলনায় শ্রীমঙ্গলে খুব বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২০ মেট্টিক টন চাল সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। আমরা এসব এলাকায় ত্রান বিতরণ শুরু করেছি, কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।