বরিশালে হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখর কামারপাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৫ই জুলাই ২০২২ ০৬:২২ অপরাহ্ন
বরিশালে হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখর কামারপাড়া

আর মাত্র ৫ দিন বাকি কোরবানী ঈদের। আর ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন বরিশাল শহরের কামার শিল্পীরা। সারাক্ষণ টুং টাং শব্দে লোহার যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যস্ত কামার শিল্পীরা। পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে কয়েক দিন ধরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কামার পট্টির কারিগররা। একটু ফরসুত নেই তাদের। কোকিল ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কোরবানীর গবাদিপশু জবাই করতে এবং মাংস তৈরীতে দা, বটি, কুঠার, ছুড়ি, চাপাতি ও কাটারী সহ কয়েকটি আইটেমের অস্ত্র তৈরির কাজ। 


বরিশাল জেলার কয়েকটি উপজেলার সবকয়টি হাট বাজারের কামারের দোকান গুলোতে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। পশু কোরবানি ও মাংস কাটার অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য অনেকে আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রেখেছে বলে জানান তারা। রবিবার বিকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, টুলে বসে আগুনে পোড়া লোহা পেটাচ্ছেন কারিগররা। 


দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ছুরি, বটি, দা, চাপাতি, কুড়াল,রামদাসহ প্রয়োজনীয় সব অস্ত্র। স্প্রিং এবং সাধারণ ধাতব লোহা দিয়ে তৈরি এসব অস্ত্র পছন্দ মতো কিনছেন ক্রেতারা। 


বরিশাল শহরের চাঁদমারী এলাকার কামার সঞ্জিব কর্মকার আমার সংবাদকে বলেন, সারাবছর আমাদের প্রায় বসেই দিন কাটাতে হয়। তার মধ্যে গত দুইটি বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে কাজ ছিলো না বলেই বলা যায়। তবে এবছর করোনা একটু কম থাকায় কাজের চাপ অনেকটা বেশি। 


নগরীর বাজার রোড ও বাশেঁর হাটখোলার কামার সুনীল কর্মকার বলেন, আর ৪/৫ দিন পর কোরবানি ঈদ। তাই কাজের চাপ একটু বেশি। ঈদ চলে গেলে আবার সারাবছর অন্য পেশায় গিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি, আরো বলেন আমাদের বছরের কোরবানী ঈদে একটু কাজ হয়। তার পর কোন কাজ না থাকায় দোকান বন্ধ করে রিক্সাচালাতেও হয়। এটাই আমাদের জীবন। 


কালিজিরা এলাকার দিকে শংকর কর্মকার বলেন, আমার পাঁচজন ছেলে মেয়ে নিয়ে শুধু কামারের কাজ করে সংসার চালাতে পারি না। তাই অন্য কাজও করতে হয়। তিনি আরো জানান, সারাবছর অন্য কাজ করেই সংসার চালাই। আগের মতো কামারের কাজ এখন হয় না। কোরবানির ঈদ আসলে কামারের চাহিদা দ্বিগুণ বাড়ে তখন এ কাজ করি। ঈদ চলে গেলে আবার অন্য পেশায় চলে যাই। 


বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া বাজারের কামার গোপাল দাস বলেন, এলাকার অনেক মানুষ এসে ছুরি, বটি, দা, চাপাতি কিনে নিচ্ছেন। ঈদের আর বেশি সময় বাকি নেই, তাই আমাদের ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে বহুগুণ। তিনি আরো বলেন, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে আমাদের এ ব্যস্ততা। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান অনেক ভালো, দামও একটু বেশি। লোহার মানভেদে জিনিসপত্রের দাম নির্ভর করে। 


একাধিক কামার শিল্পীরা বলেন, সরকারি কোনো আর্থিক সহযোগিতা না পেলে হয়তো এ শিল্প একদিন হারিয়ে যাবে। বরিশাল কর্মকার সমিতি’র সভাপতি কর্মকার বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তি’র বিকাশ ঘটায় গ্রাম বাংলার কামার শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। 


এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারী ভাবে উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানাই। না হলে তরুন প্রজন্ম একদিন কামার শিল্প কি তা চিনবে না।