২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষাব্যবস্থা ও দেশের মুদ্রণ শিল্পের জন্য সমন্বিত প্রভাব ফেলতে পারে। এ সিদ্ধান্তের সুবিধা ও অসুবিধা উভয় দিকেই নজর দেওয়া জরুরি।
আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বই ছাপার খরচ কমে আসার সম্ভাবনা থাকে। বিদেশি ছাপাখানার উন্নত মেশিনারি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করলে বইয়ের মানও উন্নত হতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের বই ছাপার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এটি শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নয়নের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ থাকে। দরপত্রের নিয়মকানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হলে দুর্নীতি ও অনিয়মের সম্ভাবনা কমে আসে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করলে বিভিন্ন বিকল্প মূল্য এবং সরবরাহের সময়সূচি বিবেচনা করতে সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে, দেশের কাগজশিল্প ও ছাপাখানা এই সিদ্ধান্তে বড় আঘাত পেতে পারে। দেশের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিলে লাখো শ্রমিক বেকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। কাগজ, কালি, গ্লু, মেশিনারি, প্যাকেজিং ও সরবরাহে জড়িত শ্রমিক ও মুদ্রণ শিল্পের কর্মচারীরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে স্থানীয় শিল্পে ধস নামতে পারে এবং বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে দেশের বাইরে বই ছাপা হলে বিদেশে চলে যাবে দেশের ৬০০ কোটি টাকা। দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাওয়ার কারণে অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিদেশি ছাপাখানায় ভ্যাট ও ট্যাক্স সরকারের দ্বারা বহন করা হলেও দেশি প্রতিষ্ঠান কম খরচে বই ছাপতে পারে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের ফলে দেশের অর্থ দেশের বাইরে যাবে এবং কাগজশিল্পে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
তৃতীয়ত, বইয়ের মানের সাথে পাঠ্যক্রমের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। দেশি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় পাঠ্যক্রমের সাথে মানানসই বই প্রস্তুতে অভিজ্ঞ। তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান প্রতিটি প্রয়োজনীয় স্থানীয় সূক্ষ্মতা এবং শিক্ষাবিষয়ক প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে সময় লাগতে পারে।
সার্বিকভাবে, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নত করার সম্ভাবনা থাকলেও দেশের মুদ্রণ শিল্প, শ্রমিক ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করার জন্য সমন্বিত নীতি প্রয়োজন। দেশি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিয়ে সীমিত ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এভাবে শিক্ষার মান উন্নত করা সম্ভব হবে, দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি হবে না এবং মুদ্রণ শিল্প টিকবে।