শরীয়তপুর ভেদরগঞ্জে শুরু হয়েছে ফসলি জমি কাটার হিড়িক। রাত-দিন সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলছে মাটি কাটা। ফসলি জমির টপ সয়েল বা মাটির উপরিভাগ কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটা,ডোবা-নালা ভরাট সহ ইট তৈরির কাজের জন্য। কৃষকদের অভাবের সুযোগে এসব মাটি কিনে নিয়ে ইট তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। মূলত নগত টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে উর্বরতা শক্তি হারিয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হচ্ছে কৃষিজমি। এতে ফসলহানির আশষ্কা করছেন কৃষিবিদরা।
আইনের প্রয়োগ না থাকায় মাটি ব্যবসাায়ীরা এক শ্রেণীর দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে জমির টপ সয়েল নির্বিঘ্নে কেটে নিচ্ছেন। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৬০ ইটভাটা মালিকদের দাবি অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৩০টি ইটভাটার লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নবায়ন নেই। ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন না মেনে হাট বাজারের পাশে, আবাসিক এলাকা,ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠ সংলগ্ন এলাকায় এসব ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ অফিস সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জে মোট আবাদি জমির পরিমান ২৬ হাজার ৪২৮ হেক্টরের মধ্যে আবাদি জমির পরিমান ১৮ হাজার ৪৩৯ হেক্টর। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে পাঁচ থেকে সাত একর জমির প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী ৬০টির মতো ইটভাটা স্থাপনে চলে গেছে কমপক্ষে ৪০০ একর আবাদি জমি। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রতিবছর শত শত একর ফসলি জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার কারনে ফসলের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটা এলাকা ও এর আশেপাশের বেশির ভাগ ফসলি জমির মাটির পাঁচ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কাটা হয়েছে । এতে এসব ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে।
মাটি বিক্রি করছেন এমন চার-পাঁচজন কৃষক জানান, ইটভাটার মাটি বিক্রি করার জন্য এক শেনীর দালাল গ্রামে গ্রামে ঘুরে টাকার লোভ দেখিয়ে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায়। ধানের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় সহজ-সরল কৃষকরা এই ফাঁদে পড়ে ফসলি জমির মাটি স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। জমির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথা অনেক কৃষকই জানে না। আবার অনেকে ফসলের সঠিক দাম না পাওয়ায়। জমির মাটি বিক্রি করে। মাটি বিক্রি করে জমির ক্ষতি করছেন কেন জানতে চাইলে ছয়গাঁ গ্রামের কৃষক কাইছার ঢালী বলেন, ধানের দাম নেই। তাই মাটি বিক্রি করে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মোঃ আমির হামজা বলেন,ফলনযোগ্য জমির উৎপাদনশক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইি গভীরতায়। মাটির এই অংশে যে কোন ফসল বেড়ে উঠার গুনাগুন সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপনের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহন করে বড় হয়। এই টপ সয়েল একবার কেটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রান থাকে না। ফলে পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ওই জমিতে কোন পসল উৎপাদিত হয় না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, জমির টপ সয়েল বিক্রি করলে জমির উৎপাদনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। জমির টপ সয়েল বিক্রি না করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীল আল নাসীফ বলেন, ফসলি জমির টপ সয়েল ইটভাটায় বিক্রি করে পুকুর খনন করলে এ জমি আর কখনো খুজে পাওয়া যাবেনা। যে কারনে এ এলাকায় পুকুর খনন কালে চার-পাঁচটি ভেকু মেশিনের মালিক কে জরিমানা করেছি। অপর তিনটি ভেকু মেশিনের ব্যাটারী জব্দ করে রেখেছি। তবে যে হারে এ উপজেলায় ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাদ্য ঘাটতিতে বড় ধরনের হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।