অপব্যবহারে জীবানু ধ্বংস হয় না, বরং জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ যদি মান সম্পন্ন না হয় ভেজাল নিম্নমানের হয় নির্বিচারে প্রয়োগ প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হয় তাহলে তা সমাজের জন্য স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে অধিকাংশ ফার্মেসিগুলো। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে নিম্ন মানের ওষুধ। সরেজমিনে রাত-দিন গুরে দেখা যায়, বিশেষজ্ঞ সেজে রোগী দেখার প্রবণতাও বেড়েছে সমহারে। নামসর্বস্ব নিম্ন মানের ওষুধ খেয়ে একদিকে রোগে কষ্ট পেয়ে আর্থিকভাবে প্রতারিত হচ্ছেন এলাকার মানুষ। অপরদিকে নামীদামি কোম্পানিগুলো সুনাম হারানোর পাশাপাশি তারা প্রতিনিয়ত ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকেখোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সরাইল উপজেলার সদর বাজার, কালিকচ্ছ বাজার, চুন্টা বাজারে, পাকশিমুল বাজারে, অরুয়াইল বাজারে, শাহজাদাপুর বাজার, পানিশ্বর বাজারে, ও শাহবাজপুর বাজারে এলাকায় যত্রতত্র গড়ে উঠা ওষুধ বিক্রির দোকান ও হাতুড়ে ডাক্তারদের দ্বারা পরিচালিত তথাকথিত চেম্বার কাম ক্লিনিকের কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোক এদের কাস্টমার।
সরাইল উপজেলার ৫০ শষ্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও সেখানে ডাক্তার ও ওষুধ স্বল্পতায় নিরুপায় বিমুখ লোকজন এসব ডাক্তারদের দারস্থ হচ্ছেন। কথিত এসব গ্রাম্য ডাক্তাররা পশু থেকে শুরু করে প্রসূতি পর্যন্ত চিকিৎসা দিয়ে মানুষকে মরণাপন্ন করে তুলছে। কোনো কোনো সময় এসব অপচিকিৎসায় এলাকায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অপরদিকে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সর্ম্পকে একেবারেই অজ্ঞ লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় ভারতীয় মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট, সিরাপ শক্তিবর্ধক শালসা, নেশা জাতীয় সিরাপ, যৌন উত্তেজক ও গর্ভ নষ্টের ট্যাবলেট দেদারছে বিক্রি করছেন। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র ও হার মানে তাদের কাছে। সরাইল সদর বাজার ও সরকারী হাসপালের সামনে এমন চিত্র দেখা যায়।
বিশেষ একটি সূত্র জানায়, দেশের খ্যাতিসম্পন্ন আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের ওষুধ যে টাকায় কমিশন দিচ্ছে তার চেযে অধিক কমিশন দিয়ে এসব অখ্যাত কোম্পানিগুলো ওষুধ বিক্রি করায় এক শ্রেণির লোক সস্তা ওষুধের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। তাই লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ বিক্রিতে ঝুঁকে পড়েছেন বেশি। অনেক সময় দেখা যায় ডাক্তারদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ফার্মেসিতে গেলে তাদের ব্যবস্থাপত্রের ওষুধ পরিবর্তন করে হাতে তুলে দেয়া হয় অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ। এসব হওয়ার কারণ আইন প্রয়োগে শিথিলতা,দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব এবং অজ্ঞতা ভেজাল বা নিম্ন মানের ওষুধের বাজার বিস্তারের প্রধান কারণ। সরাইল বাজারে এর উপর ভর করছে ফার্মেসিতে ভয়ংকর ডাক্তার। বেশির ভাগ ওষুধ বিক্রেতা রোগের উপসর্গ জেনে নিজেরাই ওষুধ দেন। এছাড়া ওষুধ বিক্রি হচ্ছে প্রেসক্রিপশন ছাড়া। যোগ্যতা ছাড়াই অবৈধভাবে ওষুধ বিক্রেতার কাজ করছে ফার্মেসিতে অনেকে। সবচেয়ে বেশি ওষুধ দেয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রুপের। অনেক ওষুধ বিক্রেতার সাথে কথা হলে এমন করে বলেন, এত কিছু জিজ্ঞাস করেন না আমরা নরমাল অ্যান্টিবায়োটিক রোগেকে দিতে পারি। রোগীভীর দেখেন না পরে কথা বলব।
অথচ বাংলাদেশের সর্বশেষ প্রণীত জাতীয় ওষুধ নীতি অনুযায়ী চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রেতা কর্তৃক কোনো রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া নিষেধ। তবে এ এলাকার রুপ অন্যটা। কর্মকর্তারা ফার্মেসি খোলার অনুমতি নিয়ে যখন আয়েশে অফিস করে তখন বিক্রেতারাই ডাক্তার সেজে বসেন। স্পর্শকাতর, ঝুকিপূর্ণ নানা ওষুধ তারা বিনা ব্যবস্থাপত্রে তুলে দেয় গণমানুষের হাতে। নিম্ন মানের এবং ভেজাল ওষুধ গছিয়ে দিতেও তাদের বাধে না। ফলে রোগ মুক্তির ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়ছে। ভেজাল ওষুধে মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটছে, রাত-দিন চলছে এমন নৈরাজ্য।
সম্প্রতি সরাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাসিক সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়, গণমাধ্যমে খবর হচ্ছে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা হচ্ছে এটুকুই। সংকটের সমাধান মেলে না। দায়ী ব্যক্তিদের নেয়া হয়না কাঠগড়ায়। ওষুধ হলো রাসায়নিক পদার্থ যা সঠিক পরিমাণ, সঠিক মাত্রা, সঠিক রোগের জন্য গ্রহণ সেবন এবং সঠিক পরিমাণ মেয়াদ পর্যন্ত চালালে মানুষের জন্য কার্যকর। উপজেলার সচেতন মানুষের দাবী এ ভেজাল, নিম্নমানের ও মেয়াদোর্ওীণ ওষুধ বিক্রির বিরুদ্ধে আইনীব্যবসা নেওয়া প্রয়োজন। বাজারে বা গ্রামের মোড়ে মোড়ে অনেক ফার্মেসীতে নিজে ডাক্তার সেজে রোগীদেরকে চিকিৎসা করছে। দেখবে কে?
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।